ঢাকা শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৫

মালিবাগে জুয়েলার্সে দুর্ধর্ষ চুরি

তিন মাস রেকি করে চক্রটি, গ্রেপ্তার ৪ 

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৮, ২০২৫, ১২:৩৪ এএম
  • উদ্ধার ১৯০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা
  • মার্কেটের গ্রিল কাটতেই সরঞ্জাম আগে থেকেই লুকিয়ে রাখা হয়
  • ২০২১ সালেও চট্টগ্রামে স্বর্ণের দোকানে চুরি করে চক্রটি

রাজধানীর মালিবাগে ফরচুন শপিং কমপ্লেক্সের শম্পা জুয়েলার্সে চুরির ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় ১৯০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ৯৩.৫ গ্রাম রুপা, নগদ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২০০ টাকা ও ১টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় গ্রেপ্তাররা হলেন- শাহিন মাতাব্বর ওরফে সাহিদ ওরফে শাহিন (৪৬), অনিতা রায় (৩১), নূরুল ইসলাম (৩৩) ও  উত্তম চন্দ্র সুর (৪৯)।

ডিবি বলছে, চক্রটি প্রায় তিন মাস আগে থেকে এ স্বর্ণের দোকানে চুরির পরিকল্পনায় রেকি শুরু করে। যে দিন রাতে চুরি হয়, ওই দিন একজন ফরচুন মার্কেটের ওয়াশরুমের প্রবেশ করে জানালায় একটি সুতা ঝুলিয়ে রাখে। পরে ওই সুতার সাহায্যে মোটা দড়ি বেঁধে ওপরে উঠে জানালার গ্রিল ভেঙে মার্কেটের ভেতরে প্রবেশ করে। সেখানে আগে থেকে লুকিয়ে রাখে বোরকাসহ চুরির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম।

গতকাল শুক্রবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফরচুন মার্কেটের দোতলায় শম্পা জুয়েলার্সে গত ৮ অক্টোবর রাতে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রমনা থানায় মামলার পর আমরা ছায়া তদন্ত শুরু ডিবি। সিসিটিভি ফুটেজ, তথ্যপ্রযুক্তি ও মাঠ তথ্যের ভিত্তিতে তিন দিনের টানা অভিযানে চোর চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

তিনি বলেন, আসামিরা গত ৩ মাস ধরে ফরচুন শপিংমলের স্বর্ণালংকার চুরির পরিকল্পনা করে সে পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বেশ কয়েকবার রেকি করে। চুরির উদ্দেশ্যে তারা হাতুড়ি, শাবলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম আগে থেকেই মার্কেটের পেছনে টিনের চালের নিচে লুকিয়ে রাখে। ঘটনার দিন দিনের বেলায় আসামি সুমন মার্কেটে প্রবেশ করে বাথরুমের জানালার গ্রিলে সুতার মাধ্যমে ইউ লুপ তৈরি মাটি পর্যন্ত নামিয়ে বেঁধে রাখে ও চুরির সময় নিজেদের মুখ ঢেকে রাখার জন্য বাথরুমে বোরকা রেখে আসে। রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে আসামিরা গণপূর্ত কোয়ার্টারের ভেতর দিয়ে মার্কেটের পেছনে পৌঁছায়। আগে থেকে বাঁধা সুতার সঙ্গে দড়ি বেঁধে তারা ছাদে উঠে গ্রিল কেটে বাথরুমের ভেতরে প্রবেশ করে ও বোরকা পরিহিত অবস্থায় বাথরুমের দরজা ভেঙে শপিংমলে প্রবেশ করে শম্পা জুয়েলার্সে চুরি করে। পরে  রাত আনুমানিক ৪টা ২৫ থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে একই পথে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় তারা ব্যবহৃত বোরকা ও সরঞ্জাম গণপূর্ত কোয়ার্টারের টয়লেটের সেপটিক ট্যাঙ্কে ফেলে যায়।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এ ঘটনায় ধারাবাহিক অভিযানে প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে শাহিন মাতাব্বর ওরফে সাহিদ ওরফে শাহিনকে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। শাহিনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার বাড়ির গোয়ালঘর থেকে প্রায় ১২১ দশমিক ৭ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। একই দিন বরিশালের উজিরপুর থানার পূর্ব হারতা গ্রামে অভিযান চালিয়ে পলাতক আসামি শৈশব রায় সুমনের স্ত্রী অনিতা রায়ের হেফাজত থেকে  ৫২ দশমিক ৮১ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয় ও বিকেল সোয়া ৫টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অপর এক অভিযানে গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে নূরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে প্রায় ২ ভরি স্বর্ণ, ১টি মোটরসাইকেল ও ১ লাখ ৭৭ হাজার ২০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। অর্থ সরবরাহকারী ও রেকিতে অংশগ্রহণকারী উত্তম চন্দ্র সুরকে গতকাল শুক্রবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে শাখারী বাজারের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ১৩ দশমিক ৬৭ ভরি স্বর্ণ ও ৯৩ দশমিক ৫ গ্রাম রৌপ্য উদ্ধার করা হয়।

শফিকুল ইসলাম বলেন, চক্রটি এর আগেও গত ২০২১ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী মার্কেটে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় জড়িত ছিল। সেই ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর জামিনে এসে আবার একই ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। তদন্তে জানা গেছে, গ্রেপ্তারদের একজনের স্ত্রীও বিষয়টি জানতেন এবং সহযোগিতা করেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে ডিবি।

উদ্ধার হয়েছে ১৯০ ভরি স্বর্ণ, বাকিটা কোথায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিবির এই প্রধান কর্মকর্তা জানান, দোকান মালিক দাবি করেছেন তার দোকানে মোট ৫০০ ভরি স্বর্ণ ছিল। তবে উদ্ধার হয়েছে ১৯০ ভরি। বাকি স্বর্ণ কোথায় আছে, তা জানতে ডিবি তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। একজন আসামি এখনো পলাতক। তাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে বাকি স্বর্ণের অবস্থান জানা যাবে। তিনি আরও বলেন, চুরি হওয়া স্বর্ণ এখনো বিক্রির পর্যায়ে যায়নি। কিছু অংশ গলানো অবস্থায় পাওয়া গেছে, যেখানে দোকানের ট্যাগ এখনো লেগে আছে। বিক্রির আগে আমরা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। ডিবি কর্মকর্তা বলেন, চক্রের সদস্যরা সাধারণত কৃষিকাজ ও গরুর ফার্মে কাজ করার পরিচয়ে এলাকায় অবস্থান করতেন। কিন্তু গোপনে পরিকল্পিতভাবে বড় ধরনের চুরির প্রস্তুতি নিতেন। সুযোগ পেলেই স্বর্ণ বা মূল্যবান জিনিস চুরি করতেন।