বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্ট জয়ের ইতিহাসের শেষ জীবিত সাক্ষী কানছা শেরপা আর নেই। ১৯৫৩ সালের ঐতিহাসিক অভিযানে অংশ নেওয়া এই কিংবদন্তি পর্বতারোহী বৃহস্পতিবার নেপালের কাঠমা-ুতে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
কানছা শেরপার পরিবার জানিয়েছে, তিনি কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন বলে জানিয়েছেন নাতি তেনজিং চোঘ্যাল শেরপা।
১৯৩৩ সালে জন্ম নেওয়া কানছা ছিলেন তখন কেবল ১৯ বছরের তরুণ, যখন তিনি স্যার এডমুন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগে শেরপার নেতৃত্বে প্রথম সফল এভারেস্ট অভিযানে অংশ নেন। পাহাড়ে অভিযানের পূর্ব-অভিজ্ঞতা না থাকার পরও তিনি হিলারি-নরগের ৩৫ সদস্যের দলে পোর্টার (পর্বতারোহীদের সহকারী) হিসেবে যোগ দেন এবং টানা দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা কঠিন যাত্রায় খাদ্য, তাঁবু ও বিভিন্ন সরঞ্জাম বহন করে বেইজ ক্যাম্প পর্যন্ত পৌঁছান। তিনি ছিলেন সেই তিন শেরপার একজন, যারা শেষ পর্যন্ত ৮ হাজার মিটার উচ্চতা পাড়ি দিতে পেরেছিলেন।
১৯৫৩ সালে স্যার এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগেদের সঙ্গে সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছতে পারেননি কাঞ্চা। কিন্তু অভিযান সফল হওয়ার পেছনে তাঁর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে মাউন্ট এভারেস্টের দক্ষিণ সামিট বলে পরিচিত ক্যাম্প পর্যন্ত উঠেছিলেন তিনি।
পরবর্তী সময়ে যে নেপালিরা পাহাড়ি গাইড হিসেবে কাজ করেছেন, তাদের কাছে কানছা ছিলেন কিংবদন্তি ও অনুপ্রেরণার উৎস। ওই ঐতিহাসিক এভারেস্ট অভিযানের পরও দুই দশকের বেশি সময় ধরে কানছা শেরপা হিমালয় পর্বতমালায় হাজার হাজার মিটার উচ্চতার নানান অভিযানে পোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে স্ত্রীর অনুরোধে তিনি এই দুঃসাহসিক যাত্রা থেকে সরে আসেন।
নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফুর গেলজে শেরপা বলেন, ‘তিনি ছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তি ও পুরো পর্বতারোহণ জগতের প্রেরণার উৎস। আজ আমরা আমাদের অভিভাবককে হারালাম।’
প্রথম অভিযানের পরও কানছা শেরপা আরও দুই দশক হিমালয়ে কাজ করেন। কিন্তু সহযাত্রীদের একের পর এক মৃত্যু দেখার পর, তার স্ত্রী অনুরোধ করেন বিপজ্জনক অভিযান ছেড়ে দিতে। এরপর তিনি পরিবার নিয়ে নেপালের সলুখুম্বু জেলার নামচে বাজারে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
কানছার মৃত্যুতে নেপালসহ গোটা পর্বতারোহী সমাজ শোকাহত। অনেকেই বলছেনÑ কানছা শেরপার প্রয়াণ মানে এভারেস্ট জয়ের প্রথম অভিযানের শেষ অধ্যায়টির সমাপ্তি।