কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার এখন একটি বৈশ্বিক উদ্বেগে পরিণত হয়েছে, এমনটি বলেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। এসব অপতথ্য রোধে ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং ব্যবস্থা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেও জানান তিনি। এ লক্ষ্যে আজ বুধবার শুরু হচ্ছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। এদিকে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার অগ্রগতির জন্য নিবেদিত অলাভজনক, নির্দলীয় সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। সিইসি বলেন, এআইয়ের অপব্যবহার এখন বৈশ্বিক মাথাব্যথা। যেকোনো যন্ত্রের মতো এটি ভালো কাজের জন্য যেমন ব্যবহার করা যায়, তেমনি খারাপ কাজের জন্যও করা যায়। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য মোকাবিলায় নির্দিষ্ট ও বাস্তবভিত্তিক সুপারিশ দিতে তিনি বিশেষজ্ঞদের প্রতি আহ্বান জানান। ‘ইন্টিগ্রেশন অব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইন আপকামিং ন্যাশনাল পার্লামেন্ট; ইলেকশন টু কাউন্টার মিসইনফরমেশন অ্যান্ড ডিজইনফরমেশন’ শীর্ষক সেমিনারটির আয়োজক ইসির আইডিয়া প্রজেক্ট ও সিবিটিইপি প্রজেক্ট। সিইসির সঙ্গে চার নির্বাচন কমিশনার সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সিইসি বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার রোধ ও নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন এআই প্রযুক্তি একীভূত করার উদ্যোগ নিচ্ছে। তিনি বলেন, ব্যবস্থাটি এমন হতে হবে, যা গভীর রাতেও উদ্ভূত মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য শনাক্ত ও মোকাবিলায় সক্ষম হবে। এটি হবে ২৪ ঘণ্টার কাজ। নির্বাচন কমিশনকে ঠিক করতে হবে, কী ধরনের পেশাজীবী এতে যুক্ত করা হবে, কত দ্রুত তথ্য যাচাই করা যাবে এবং কোন সংস্থা এতে সহায়তা করবে।
তথ্য যাচাই সেলের কাঠামো, জনবল, প্রতিটি শিফটে প্রয়োজনীয় কর্মীর সংখ্যা এবং সমন্বয় প্রক্রিয়া সম্পর্কে নির্দিষ্ট প্রস্তাব প্রয়োজন উল্লেখ করে নাসির উদ্দিন বলেন, পাহাড়ি অঞ্চল বা দুর্গম দ্বীপাঞ্চলের মতো প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উদ্ভূত ভুল তথ্য মোকাবিলা বড় চ্যালেঞ্জ। প্রত্যন্ত এলাকার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সেলের সংযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমি শুধু নীতিগত দিকনির্দেশনা চাই না। আমাদের দরকার বাস্তবসম্মত পরিকল্পনায় কারা কাজ করবে, কতজন লাগবে এবং কীভাবে আমরা দূরবর্তী এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করব। এই সেমিনারের মাধ্যমে নির্বাচনি ভুল তথ্য মোকাবিলায় কার্যকর সুপারিশ পাওয়া যাবে, যা আসন্ন ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে আরও সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে সহায়তা করবে।
এ সময় ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, আমরা নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করি, নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে কাজ করি, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার যতই প্রাসঙ্গিকতা থাকুক না কেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যে ভয়াবহতা, তার প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যে বিশ্বে ৯২ শতাংশ নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ইসি সচিব বলেন, আমরা একটি ভালো অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই অপপ্রযুক্তি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সটাকে একটু ব্যঙ্গ করে বলছি, অপপ্রযুক্তি রোধের ক্ষেত্রে আপনাদের সবার সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রশিক্ষণ আজ বুধবার শুরু করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ (টোট) বুধবার (আজ) সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে অন্য চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত থাকবেন। আগামী ১১ নভেম্বরের মধ্যে (সম্ভাব্য) দুটি করে ব্যাচে ২৫ জন তথা মোট ৫০ জনের দুই দিনব্যাপী (১২টি সেশনে) প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। সংসদ নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা পদে নিয়োজিত থাকেন মাঠ প্রশাসনের এই কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আইআরআই প্রতিনিধিদল দেশে : বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার অগ্রগতির জন্য নিবেদিত অলাভজনক, নির্দলীয় সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এখন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনি পরিবেশ মূল্যায়ন করছে। আইআরআই দলটি ২০ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে তাদের প্রাক-নির্বাচনি মূল্যায়ন মিশন মোতায়েন করেছে। তারা আগামী ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত এই কাজ অব্যাহত রাখবে।
জানা যায়, আন্তর্জাতিক নীতি ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত এই উচ্চস্তরের মিশনটি গত ২০ অক্টোবর ঢাকায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, সরকারি কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে দেখা করার জন্য এবং নির্বাচনি প্রতিযোগিতা ও নাগরিক সম্পৃক্ততার মূল বিষয়গুলো পরীক্ষা করার জন্য।
এ বিষয়ে আইআরআই’র এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর জোহানা কাও সাংবাদিকদের বলেন, এই মিশনটি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সমর্থনের জন্য আইআরআই’র প্রতিশ্রুতিকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। আমরা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং নির্বাচনি পরিবেশের অবস্থা মূল্যায়নের জন্য উন্মুখ।
মিশন শেষে আইআরআই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের প্রস্তুতির নিরপেক্ষ মূল্যায়ন, নির্বাচনি অখ-তা বজায় রাখা এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনি পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য সুপারিশ প্রদান করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করবে।
১৯৮৪ সাল থেকে আইআরআই বিশ্বব্যাপী ২৫০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন সংগঠিত করেছে। আইআরআই প্রতিনিধি দল গত সোমবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার কার্যালয়ে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।