ঢাকা শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫

সূর্যকে প্রদক্ষিণ করা দ্বিতীয় দ্রুততম গ্রহাণুর খোঁজ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৫, ১২:৪৫ এএম

এত দিন ধরে লুকিয়ে ছিল সূর্যের আড়ালে। পৃথিবীর কক্ষপথের মধ্যেই এটি সূর্যের চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু সূর্যের চোখ ধাঁধানো আলোয় এত দিন ঠাহর করা যায়নি এই পাথরের পি-টিকে। অবশেষে মহাকাশবিজ্ঞানীদের কাছে ধরা দিল এত দিন ধরে লুকিয়ে থাকা গ্রহাণুটি।

মহাকাশবিজ্ঞানীরা সদ্য খুঁজে পাওয়া এই গ্রহাণুটির নাম রেখেছেন ‘২০২৫ এসসি৭৯’। ব্যাস প্রায় ৭০০ মিটার। সূর্যের চার দিকে একবার পাক খেতে এটি সময় নেয় মাত্র ১২৮ দিন। আমাদের সৌরম-লে এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গ্রহাণুগুলোর মধ্যে এটির কক্ষপথই দ্বিতীয় দ্রুততম। এর আগে ২০২১ সালে একটি গ্রহাণুর খোঁজ মিলেছিল, যেটি ১১৩ দিনে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। পরে আরও একটি গ্রহাণুর খোঁজ মেলে, সেটিও ১১৩ দিনেই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। ‘২০২৫ এসসি৭৯’ সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে তাদের চেয়ে ১৫ দিন বেশি সময় নেয়।

আমেরিকার ‘কার্নিজ সায়েন্স’-এর মহাকাশবিজ্ঞানী স্কট এস শেপার্ড এই গ্রহাণুটি প্রথম আবিষ্কার করেন। এটি একটি ‘আটিরা’ গ্রহাণু (পৃথিবীর কক্ষপথের ভেতরেই যে গ্রহাণুগুলো ঘুরে বেড়ায়, সেগুলোকে আটিরা গ্রহাণু বলা হয়)। এই নিয়ে ৩৯টি ‘আটিরা’ গ্রহাণুর খোঁজ পেলেন বিজ্ঞানীরা। সূর্যকে খুব কাছ থেকে প্রদক্ষিণ করছে নতুন খুঁজে পাওয়া এই গ্রহাণু। পৃথিবী তো বটেই, আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে শুক্রের কক্ষপথের ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছে ‘২০২৫ এসসি৭৯’। ১২৮ দিনের কক্ষপথে এটি বুধের কক্ষপথের ভেতরেও ঢুকে পড়ে কখনো কখনো।

নতুন খুঁজে পাওয়া এই গ্রহাণুর কথা গত সপ্তাহেই প্রকাশ্যে এনেছে ‘কার্নিজ সায়েন্স’। তারা জানাচ্ছে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর শেপার্ড প্রথম এই গ্রহাণুটিকে লক্ষ করেন। সূর্যকে খুব কাছ থেকে প্রদক্ষিণ করছে এটি। ফলে সৌরছটার ঝলকানির জন্য এটি এত দিন দেখা যায়নি।

সৌরছটার আড়ালে লুকিয়ে থাকা গ্রহাণুগুলো পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। কারণ, এগুলো থেকে যে স্বল্প পরিমাণ আলো প্রতিফলিত হয়, তা সূর্যের আলোর আড়ালে ঢেকে যায়। এগুলো চিহ্নিত না-হওয়ার ফলে এদের কক্ষপথও বোঝা যায় না। কোনো গ্রহাণুর কক্ষপথ পৃথিবীর কক্ষপথকে অতিক্রম করে যাচ্ছে কি না, তা-ও বোঝার উপায় থাকে না। ফলে সেগুলোর সঙ্গে পৃথিবীর ঠোকাঠুকি লাগতে পারে কি না, তা-ও অজানা থেকে যায়। এমন লুকিয়ে থাকা গ্রহাণুগুলোরই খোঁজ চালাচ্ছেন শেপার্ড এবং তার গবেষকদল।

তাদের এই কাজে অর্থ সাহায্য করেছে নাসাও। ‘ডার্ক এনার্জি ক্যামেরা’ এবং আমেরিকার ‘ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন’-এর বিভিন্ন টেলিস্কোপ ব্যবহার করে পৃথিবীর জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে, এমন গ্রহাণুগুলোর খোঁজ চালাচ্ছে তারা। ওই খোঁজ চালানোর সময়েই ধরা পড়ে ‘২০২৫ এসসি৭৯’। ‘কার্নিজ সায়েন্স’-এর ম্যাগেনাল টেলিস্কোপ এবং ‘ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন’ জেমিনি টেলিস্কোপÑ উভয়ের দৃষ্টিতেই এই নতুন গ্রহাণুটি ধরা পড়েছে।

মহাকাশবিজ্ঞানী শেপার্ডের কথায়, ‘যে গ্রহাণুগুলো সবচেয়ে বিপজ্জনক, সেগুলোই শনাক্ত করা সবচেয়ে বেশি কঠিন।’ কেন, সেই ব্যাখ্যাও দেন তিনি। শেপার্ড জানান, গ্রহাণু-গবেষণা সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ সাধারণত রাতের আকাশেই করা হয়। কারণ রাতের অন্ধকারে এগুলোকে শনাক্ত করা সবচেয়ে সহজ হয়। কিন্তু যে গ্রহাণুগুলো সূর্যের খুব কাছাকাছি লুকিয়ে থাকে, সেগুলোকে শুধু গোধূলির সময়েই দেখা যেতে পারে। সে কারণেই এই গ্রহাণুর বিষয়ে এত দিন জানতে পারেননি মহাকাশবিজ্ঞানীরা।

এখন অবশ্য এই গ্রহাণু সূর্যের পেছন দিকে চলে গেছে। তাই আপাতত বেশ কয়েক মাস টেলিস্কোপে আর দেখা যাবে না গ্রহাণুটিকে। সূর্যের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলে ফের দেখা যাবে। সূর্যকে কাছ থেকে প্রদক্ষিণ করার সময়ে গ্রহাণুটিতে কোনো পরিবর্তন দেখা যায় কি না, সে বিষয়ে আরও বিশদ গবেষণা করতে চাইছেন শেপার্ড এবং তার দল।