ঢাকা শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২৫

নরসিংদীতে স্বামীর দেওয়া আগুনে স্ত্রী-সন্তানসহ দগ্ধ ৫

নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২৫, ১২:৫০ এএম

নরসিংদী সদর উপজেলায় ঘুমন্ত দুই বোন ও তাদের তিন সন্তানের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দগ্ধরা হলোÑ ফরিদের স্ত্রী রিনা বেগম (৩৮), তার দুই ছেলে আরাফাত (১৫) ও তাওহীদ (৬) এবং শ্যালিকা সালমা বেগম (৩৪) ও শ্যালিকার ছেলে ফরহাদ (১২)। দগ্ধদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আগুনের ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ রিনা বেগমের স্বামী ফরিদ মিয়া জড়িত। ফরিদ মিয়া ও রিনা বেগমের দাম্পত্য জীবনে পারিবারিক কলহ চলছিল। এ কারণে রিনা বেগম তার বাবার বাড়ি সঙ্গীতা এলাকায় সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছিল। ঘটনার দিন রাত ২টার দিকে স্বামী ফরিদ মিয়া ওই ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় তার স্ত্রী রিনা বেগম, তাদের সন্তান ও শ্যালিকার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে ঘরের বাইরে থেকে দরজা তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী টিনের ভেড়া ভেঙে ঘরের ভেতর থেকে দগ্ধদের উদ্ধার করে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসে।

গত বুধবার মধ্যরাতে উপজেলার শহরতলীর সঙ্গীতা এলাকা থেকে পাঁচজনকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করার কথা জানিয়েছেন নরসিংদী মডেল থানার এসআই অনিক কুমার গুহ।

এ বিষয়ে অনিক গুহ বলেন, ৯৯৯-এ খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে কীভাবে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে তা আমরা এখনো বলতে পারছি না, তদন্তের পর বিস্তারিত বলা যাবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে দগ্ধ তিনজনকে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান।

চিকিৎসক শাওন বিন রহমান বলেন, ‘রিনার শরীরের ৫৮ শতাংশ, ফরহাদের ৪০ শতাংশ এবং তাওহীদের শরীরের ১৬ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের অবস্থা ভালো না। এ ঘটনায় দগ্ধ আরও দুজন এসেছিল, তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

রিনা বেগমসহ পাঁচজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন প্রতিবেশী ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ‘ফরিদের সঙ্গে সন্তানদের নিয়ে থাকতেন রিনা বেগম। তারা অন্যের জমিতে একটি ছাপড়া ঘর তুলে থাকেন। রাতে রিনা বেগমের সঙ্গে তার বোন ফাতেমা ও তার সন্তানরাও ঘুমিয়েছিল। রাতে দরজার নিচের ফাঁক দিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয় ফরিদ। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন দৌড়ে যায়। আগুনে রিনা ও তার দুই সন্তান এবং রিনার বোন ফাতেমা ও তার এক সন্তানের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পুড়ে যায়। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের হাসপাতালে নিয়া আসি।’

ওমর ফারুক জানান, ‘রিনা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। তাদের মধ্যে কোনো ঝগড়াঝাটি হয়েছে বলে শুনি নাই। এরপরও ফরিদ এমন কাজ কেন করল বুঝতে পারছি না। আগুন দিয়ে ফরিদ পালিয়েছেন।

ফরিদ মিয়া পেশায় পিকআপ চালক এবং তিনি নেশা করেন বলে দাবি এলাকাবাসীর। এ বিষয়ে রিনা বেগমের বাবা মহন মিয়া বলেন, ‘ফরিদ নেশা করে। সে আমার মেয়ের ওপর দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচার করছে। রাতে তাদের পুড়িয়ে দিল। আমি তার বিচার চাই।’