ঢাকা শনিবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৫

ফের অস্থির পেঁয়াজের বাজার, স্থিতিশীল সবজি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৫, ১২:২৯ এএম

বাজারে সবজির সরবরাহ বাড়ায় স্থিতিশীলতা ফিরেছে। সব ধরনের সবজি গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে সামান্য কমতেও দেখা গেছে। তবে পেঁয়াজের দামে হঠাৎ অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা। ৮০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের কলি আসতে শুরু করেছে, কিছুদিনের মধ্যেই দাম কমে আসবে।

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর নবাবগঞ্জ, আজিমপুর, পলাশী, নিউমার্কেট ও আগারগাঁও বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ৩০-৪০ টাকা। বাজারে দামের এই হঠাৎ ঊর্ধ্বগতি ও সরবরাহের সংকটে সাধারণ ক্রেতা থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, সরবরাহ চেইন ঠিক না থাকায় মজুত সংকটে পড়েছে পেঁয়াজের বাজার। অন্যান্য বছর যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হতো, চলতি বছর তা হয়নি। একই সঙ্গে আমদানিতে বাধা পড়ায় পেঁয়াজের দাম বাড়ছে।

নিউমার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ী মো. সোহাগ রানা বলেন, ‘দাম হঠাৎ বেড়েছে, তবে কেন এবং কী কারণ তা জানি না। আমরা বেশি দাম দিয়ে কিনেছি, তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বাড়ার পেছনে খুচরা বিক্রেতাদের কোনো হাত নেই। পাইকারি বাজার থেকে যে দামে কিনি, সেই অনুযায়ী বিক্রি করি। আমরা নিজেরাও জানি না কেন এমন বাড়ল। তবে দাম বাড়ায় বেচাকেনা কমেছে।’

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী হাসান গুলদার বলেন, বছরে প্রায় ৩৬ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। এবার পেঁয়াজ উৎপাদনও হয়েছিল প্রায় ৩৬ লাখ টন। আমদানি করা পেঁয়াজের কোনো দরকার ছিল না। তবে টানা বৃষ্টিতে কৃষকের প্রায় ২ লাখ টন পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এ কারণেই পেঁয়াজের বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষি মন্ত্রণালয় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারা অযাচিত পরিসংখ্যানে আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। ভোক্তার চাহিদা ও যোগানের হিসাবের গরমিলে আজ এই সংকট তৈরি হয়েছে। প্রতি বছর ৫-৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। কিন্তু যে-কোনো কারণে তা এবার হয়নি।

ক্রেতারা দাবি করছেন, আবারও বাজার সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে মুনাফা লোটার পাঁয়তারা করছে। সরকারের বাজার মনিটরিংয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে সবজির দাম কিছুটা কমলেও পেঁয়াজের এমন দাম বৃদ্ধিতে হাঁসফাঁস করছে সাধারণ মানুষ।

পেঁয়াজের আড়তদারেরা বলছেন, গত কয়েক মাসে বাইরের দেশ থেকে কোনো পেঁয়াজ আমদানি করা হয়নি। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়েই দেশের চাহিদা মেটানো হয়েছে। তবে এখন দেশি পেঁয়াজেরও কিছুটা সংকট চলছে। আবার অনেক অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ বুঝে মজুত করছেন, তাই দাম বাড়ছে। দাম হঠাৎ করে বাড়ায় কমে গেছে বেচাকেনাও।

পেঁয়াজ আমদানির এলসি বন্ধ থাকায় দাম বেড়েছে কি নাÑ এ বিষয়ে ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এস এম নাজের আহমেদ জানান, এলসি বন্ধের জন্য দামে প্রভাব পড়েনি। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের সিন্ডিকেটের ফলেই হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। মাসখানেক পর নতুন পেঁয়াজ আসবে, তার আগ পর্যন্ত তারা দাম বাড়িয়ে বড় অঙ্কের মুনাফা করতে চান।

এ ছাড়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, টমেটো ১০০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, মুলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ছোট আকারের ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং লাউ ৩০ থেকে ৫০ টাকা পিস দরে বিক্রি হচ্ছে। গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে ঝিঙে ৫০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, কচুর লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা ও ধুন্দল ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের দাম কেজিতে ৪০ টাকা কমে প্রকারভেদে ১২০ থেকে ১৮০ টাকায় নেমে এসেছে। পেঁপে ২০ থেকে ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, দেশি শসা ৫০ থেকে ৭০ টাকা এবং হাইব্রিড শসা ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুরগির বাজারেও সামান্য পরিবর্তন এসেছে। সোনালি কক মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ২৯০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৬০ টাকা, লাল লেয়ার ৩০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৯০ টাকা, ব্রয়লার ১৭০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫৭০ থেকে ৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা, গরুর কলিজা ৭৮০ টাকা, মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারে ইলিশের দাম উচ্চমুখী। ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা, ৫০০ গ্রাম ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৭০০ গ্রাম ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা এবং এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষের শিং মাছ ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, দেশি শিং ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, রুই আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, মৃগেল ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বড় কাতল ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা এবং মলা মাছ ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২১০ টাকা, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮০-৯০ টাকা।