ঢাকা শনিবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৫

গল্পের নেশায়, স্বপ্নের পথে

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৫, ০১:১৯ এএম

ছোট পর্দার পরিচিত মুখ সাগর মির্জা ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান পোক্ত করছেন নাট্যাঙ্গনে। গল্পনির্ভর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অল্প দিনে তিনি দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। ‘স্কুল প্রেমের গল্প’ দিয়ে অভিনয়জগতে যাত্রা শুরু করা এই অভিনেতা এখন নিয়মিত ছোট পর্দার ব্যস্ত শিল্পী। একের পর এক দর্শকপ্রিয় নাটকে অভিনয় করে তিনি প্রমাণ করছেন অভিনয়ই তার নেশা, পেশা ও ভালোবাসা। নিজের কাজের প্রতি নিষ্ঠা আর অভিনয়ে বৈচিত্র্য আনাই এখন তার মূল লক্ষ্য।

বর্তমানে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন এই অভিনেতা। টানা শুটিং, নতুন কাজের প্রস্তুতি আর চরিত্রে ডুবে থাকার চেষ্টায় তার দিন কাটছে। রূপালী বাংলাদেশকে সাগর বলেন, ‘বেশ ভালো ব্যস্ত যাচ্ছে, কাজের প্রেসার অনেক। এরই মধ্যে ওয়েব ফিল্ম ‘সুলতান’-এর কাজ শেষ করেছি।’

অভিনয়ে আসার গল্পটাও কম আকর্ষণীয় নয়। ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল সাগরের। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে জন্ম নেয় অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা। নিজের যাত্রার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতাম। সেই জায়গা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। প্রথমে ইউটিউবে ছোট ছোট কনটেন্ট বানাতাম, এরপর থিয়েটারে যোগ দিই। শুরুতে বাবা-মা খুব একটা সাপোর্ট করেননি, কিন্তু যখন দর্শকপ্রিয়তা পেতে শুরু করলাম, এখন তারা আমাকে খুব ইতিবাচকভাবে দেখেন।’

বর্তমান সময়ে নাটক বা ওয়েব কনটেন্টে ভিউ নির্ভরতার প্রবণতা বাড়ছে। এই নিয়ে মত জানাতে গিয়ে সাগর বলেন, ‘এখনকার সময়টা ভিউনির্ভর, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। প্রযোজকরা ইউটিউবের জন্য বিনিয়োগ করেন, তাই তাদের অর্থ ফেরত আসার জন্য ভিউ গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমি মনে করি, ভালো গল্পই আসল। দর্শক ভালো গল্প দেখতে চায়, আর ভালো গল্পে ভিউ স্বাভাবিকভাবেই আসে। আমি কখনো ভিউয়ের জন্য কাজ করতে চাইনি। চেষ্টা করেছি এমন কাজ করতে, যা দর্শক সারাজীবন মনে রাখবে এবং গ্রহণ করবে।’

অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনায়ও আগ্রহ দেখিয়েছেন সাগর। প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন নিজের অনুভবের কথা, ‘আমি এই কাজটাকে ভীষণ ভালোবাসি, শুধু অভিনয় নয়; পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গেও জড়িত থাকতে চাই। আমার মনে হয়েছে, নিজস্ব একটা আর্কাইভ থাকা উচিত, যেখানে আমি আমার পছন্দের গল্পগুলো নিয়ে কাজ করব। অনেক সময় পছন্দের গল্প চাইলেও তাতে কাজ করা সম্ভব হয় না। তাই নিজের গল্প, নিজের ভাবনা পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্যই প্রযোজনায় এসেছি। আমার মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রি থেকে আমি শুধুই পেলাম কিন্তু বিনিময়ে ইন্ডাস্ট্রিকে কিছু দিলাম না, এটা এক ধরনের স্বার্থপরতা।’

ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও স্বপ্ন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সাগর নিজের চিন্তাধারার উন্মুক্ত ছবি এঁকেছেন। তিনি জানালেন, জীবন অনিশ্চিত এবং প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। তবে একজন শিল্পী হিসেবে তার একটি স্পষ্ট লক্ষ্য আছে। বললেন, ‘জীবন অনিশ্চিত। আগামী পাঁচ সেকেন্ড পর আমি ঠিক কি করব, তা জানি না। তবে আমি চাই, ভবিষ্যতে দর্শক অন্তত মনে রাখুক, ‘সাগর মির্জা নামে একজন অভিনেতা আছেন’, যার কাজ ও অভিনয় তারা ভালোবাসবে। একটা সময় পর আমি থাকব না, সে সময়ে যেন মানুষ আমাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করুক।’

বর্তমান নাটকশিল্প ও ভিউ নিয়ে চলমান ধারণা প্রসঙ্গে সাগর বলেন, ‘এই ক্ষেত্রেও অনেকের ধ্যান-ধারণা ভ্রান্ত। তিনি মনে করেন, গল্পভিত্তিক নাটক এখনো দর্শকের কাছে প্রাসঙ্গিক। এখন অনেকেই মনে করেন, গল্পভিত্তিক নাটকের ভিউ কমে গেছে। আমার মতে, এটা এক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা। আসলে, গল্পভিত্তিক নাটকের ভিউ এখনো বেশি। তবে বিগত দুই-চার বছরে আমরা যা দেখেছি, একই ধরনের গল্পের পুনরাবৃত্তি ঘটছে। ২০২১-২২ সালে আমরা যে ধরনের গল্পে কাজ করেছি, সেই ধরনের গল্পগুলোই এখন বারবার আসছে। মানুষ সেই একই ধরনের গল্প দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে।’

সাগর ওটিটিতে তার অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে এখনো ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষার মুহূর্ত চলছে। তিনি মনে করেন, অভিনয়ে একটি নির্দিষ্ট পরিপক্বতা এবং সময় প্রয়োজন, যা এখনো অর্জন করতে হবে। বলেন, ‘আমি যখন অভিনয় শুরু করেছিলাম তখন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। এখন নিয়মিত নাটকে কাজ করছি। এটা আসলে অভিনয়ের পরিপক্বতা প্রয়োজন হয়, একটা নির্দিষ্ট বয়সের প্রয়োজন হয়। আমার কাছে মনে হয়, এখনো অভিনয়টা জানার আছে, বোঝার আছে। যখন মনে হবে অভিনয়ে কিছুটা পরিপক্বতা এসেছে, তখন চেষ্টা করব ওটিটিতে কাজ করার।’

বড় পর্দায় কাজ করার স্বপ্নও তার লক্ষ্য তালিকায় রয়েছে। তবে তিনি বুঝতে পারেন, এটি শুধু ইচ্ছার নয়, ব্যাপক প্রস্তুতির ক্ষেত্র। সাগর বলেন, ‘প্রত্যেকটা শিল্পীর স্বপ্ন থাকে বড় পর্দায় কাজ করা। যেহেতু এটা বড় পর্দা, মানুষ টিকিট কেটে সিনেমা হলে গিয়ে দেখবে। সেটার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। অভিনয় শিল্পী হিসেবে নিজেকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে, যখন মানুষ আমার সিনেমা টিকিট কেটে হলে গিয়ে দেখবে, তখনই সিনেমা করব। এখন নাটক করছি, এখানেই মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছি। এখন সিনেমাটিক চর্চার মধ্যেই আছি।’