ঢাকা শনিবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৫

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

১০ম গ্রেড পাচ্ছেন প্রধান শিক্ষকরা

হাসান আরিফ
প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৫, ১২:৩০ এএম

বাংলাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৫ হাজারের বেশি প্রধান শিক্ষকের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে। বেতন কাঠামোতে বহুদিন ধরে স্থবিরতা ও বৈষম্যের অভিযোগ থাকায় প্রধান শিক্ষকরা বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন-সংগ্রাম, স্মারকলিপি ও আলোচনার মাধ্যমে তাদের দাবির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। সেই প্রেক্ষাপটে অবশেষে বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হয়েছে সরকার।

সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত শর্ত, অনুমোদন প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ধাপ স্পষ্ট করেছে। এর ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৫,৫০২ জন প্রধান শিক্ষক নতুন গ্রেডের আওতায় আসবেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে জারি হওয়া আদেশে উল্লেখ করা হয় যে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যারা বর্তমানে ১১তম গ্রেডে (বেতন ১২,০০০Ñ৩০,২৩০ টাকা) আছেন এবং প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষক যারা ১২তম গ্রেডে (বেতন ১১,৩০০Ñ২৭,৩০০ টাকা) আছেন, তাঁরা শর্তসাপেক্ষে ১০ম গ্রেডে উন্নীত হবেন। নতুন গ্রেডে বেতন হবে ১৬,০০০Ñ৩৮,৬৪০ টাকা। এই বেতন বৃদ্ধি প্রধান শিক্ষকদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য আর্থিক উন্নতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এ গ্রেডে উন্নীতকরণের জন্য মন্ত্রণালয় কয়েকটি বাধ্যতামূলক শর্তও নির্ধারণ করেছেÑঅর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের সম্মতি নিতে হবে। অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগকে বেতন স্কেল নির্ধারণ করতে হবে। প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদন নিতে হবে এবং বিদ্যমান নিয়োগবিধিতে পদ অন্তর্ভুক্ত করে সংশোধন আনতে হবে।

প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকদের ক্ষেত্রে শর্ত: ১০ম গ্রেডে উন্নীত হওয়া সত্ত্বেও প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য মৌলিক প্রশিক্ষণ (বিটিপিটি) সম্পন্ন করতে হবে। বেতন উন্নীতকরণের পর সংশ্লিষ্ট সরকারি আদেশের কপি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে পাঠাতে হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছেÑ অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ ইতিমধ্যে সম্মতি দিয়েছে। এ ছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত ৭ আগস্ট ১০৭-সংখ্যক স্মারকে বেতন উন্নীতকরণের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন, তাদের পদমর্যাদা, দায়িত্ব, শিক্ষাপ্রশাসনে নেতৃত্বদান এবং বিদ্যালয় পরিচালনায় কেন্দ্রীয় ভূমিকার সঙ্গে মিল রেখে বেতনস্কল উন্নীত করতে হবে। তাদের দাবি ছিলÑপ্রধান শিক্ষক হিসেবে ১০ম গ্রেডে স্বীকৃতি দিতে হবে।

এই দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে প্রধান শিক্ষকরা স্মারকলিপি, দাবি উপস্থাপন, বৈঠক ও আলোচনা করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের বিভিন্ন পক্ষ একাধিকবার উল্লেখ করেছিলেন যে, বেতন কাঠামোর বৈষম্য দূর না হলে শিক্ষকতার পেশায় অনুপ্রেরণা নষ্ট হবে, এতে স্কুল পরিচালনা দুর্বল হবে।

বিশ্লেষকদের মতেÑগ্রেড উন্নীতকরণ শিক্ষক সমাজের দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ দূর করবে। বিদ্যালয় পরিচালনায় প্রধান শিক্ষকদের ভূমিকা আরও শক্তিশালী ও মর্যাদাপূর্ণ হবে। প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক হওয়ায় বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়বে। আর আর্থিক স্বস্তি কর্মক্ষমতা বাড়াতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল উন্নীতকরণ শিক্ষা খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি-অগ্রগতি। দীর্ঘ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে এখন বিষয়টি বাস্তবায়নের পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা, নিয়োগবিধি সংশোধন এবং প্রশাসনিক অনুমোদনÑসব মিলিয়ে একটি কাঠামোগত সংস্কারও এর মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। এই উন্নয়ন প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন ইতিবাচক মাত্রা যোগ করবেÑএমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।