অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, জুলাই বিপ্লবে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে থেকে সহযোগিতা পাইনি। এ জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় আমাদেরও কিছু ভুল হয়েছিল। গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত এই বৈঠকের শিরোনাম ছিল ‘নভেম্বর থেকে জুলাই: বিপ্লব থেকে বিপ্লবে’।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টাও বোধ হয় হয়নি, আমাদের রাজনৈতিক নেতারা এস্টাবলিশমেন্টের কোলে গিয়ে উঠে গেছেন। তো তরুণ হিসেবে আমাদেরও ভুল আছে, আমরা ২৫-২৬ বছরের কয়েকজন তরুণ ছিলাম পলিসি মেকিংয়ের দায়িত্বে। কিন্তু যখন আমাদের অগ্রজরা এস্টাবলিশমেন্টকে গিয়ে দায়িত্ব দিয়ে আসেন, যে আপনারা একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন, তখন আমাদের হাতে আসলে খুব বেশি কিছু থাকে না।
আসিফ মাহমুদ দাবি করেন, তারা তখন ‘এস্টাবলিশমেন্টের কাছে’ রাজনৈতিক নেতাদের না যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তাদের আহ্বান শোনা হয়নি। পরবর্তী পরিস্থিতিতে সেদিন দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় ছাত্রনেতারা দ্রুত সরকার গঠনের বিষয়ে একমত হন। আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ৫ থেকে ৮ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা রাজনৈতিক নেতাদের পাশ কাটিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তাদের সমর্থন ছাড়া একেবারে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটার পরিণতি কেমন হবে, সেটা বোঝাও তরুণ ছাত্রনেতাদের জন্য কঠিন ছিল।
আগামী নির্বাচনেও কালো টাকার দৌরাত্ম্য থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, তাই নির্বাচনে নামার আগে তার মতো অন্যদেরও ভাবতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় ১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এই বাস্তবতায় আসলে যাদের কালো টাকা আছে, তাদেরই সুযোগ আছে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার। সে জন্য আমাদেরও বারবার চিন্তা করতে হয়, ইলেকশন কি করব, না করব না। করলে কীভাবে করব। মানুষ টাকা ছাড়া ভোট দেবে কি না।’ আসিফ মাহমুদ দাবি করেন, ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে তিনি প্রস্তাব করেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘মিডল গ্রাউন্ড রেখে’ সেখানে একটা আলোচনা আয়োজনের। সেটি হয়নি। তার ভাষ্যে, ‘আমাদের বলা হলো, আপনারা ক্যান্টনমেন্টে আসেন। তো আমরা বললাম যে ক্যান্টনমেন্টে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারপর আলোচনার ভেন্যু হিসেবে একটা মিডল পয়েন্টে আমাদেরকেও আসতে হলো।
আলোচনা অনুষ্ঠানে কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘২০২৪ সালের ৮ আগস্ট একটি সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব হয়েছে। সে সময়ে নেতৃত্বে থাকা তরুণরা কতগুলো ভুল করেছে। সেই ভুল তরুণেরা এখনো চাইলে সংশোধন করতে পারে। তবে তার জন্য বেশি সময় নেই।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদের সঞ্চালনায় এই গোলটেবিলে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, পুসাবের স্থায়ী কমিটির সদস্য ফাহমিদুর রহমান, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট মোহাম্মদ সজল বক্তব্য দেন।

