ঢাকা শনিবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৫

পতিত জমিতে পানিফল চাষে ভাগ্যবদল কৃষকের

মহসিন রেজা রুমেল, দেওয়ানগঞ্জ
প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৫, ১২:৩৬ এএম

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে পতিত জলমগ্ন জমিতে পানিফল চাষ করে বাজিমাৎ করেছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলাটি নদীবেষ্টিত অঞ্চল হওয়ায় উপজেলার প্রায় সব অঞ্চলেই কম-বেশি পানিফলের চাষ হয়। অধিক পরিমাণে পানিফল চাষ হওয়ায় পানিফল বিক্রির জন্য দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের পাশে প্রতিদিন বসে পানিফলের হাট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ হাটে পাইকাররা আসেন পানিফল কিনতে। হাট ইজারাদারের দাবি, প্রতিদিন হাটে ৮-১০ টন পানিফল বিক্রি হয়। 

এদিকে পতিত জমিতে অল্প খরচে পানিফল চাষ করে বেশি দামে বিক্রি করতে পেরে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন কৃষকেরা। পানিফলের স্থানীয় নাম সিঙারা। হোটেলের ভাজা সিঙারার মতো দেখতে বলে এটার নাম দেওয়া হয়েছে সিঙারা।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ৩৯ হেক্টর পতিত জলমগ্ন জমিতে পানিফলের চাষ হয়েছে। দিন দিন পানিফলের চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

পৌর শহরের ডালবাড়ি এলাকার পানিফল চাষি আলতাফ হোসেন বলেন, এ বছর চার বিঘা জমিতে পানিফল চাষ করেছি। তাতে সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার টাকার পানিফল বিক্রি করেছি; আরও ২৫-২৬ মণ পানিফল খেতে আছে, যা আরও ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারব।

বালুগ্রামের ফরহাদ হোসেন ১৫ বিঘা জমিতে পানিফল চাষ করেছেন। তিনি বলেন, অন্যান্য চাষের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের সার ব্যবহার হলেও পানিফল চাষে অল্প পরিমাণে ইউরিয়া সারের ব্যবহার করতে হয়। বিঘাপ্রতি ২০ কেজি ইউরিয়া সার দিতে হয় আর পোকার আক্রমণ হলে বিষ প্রয়োগ করতে হয়। এ ছাড়া আর তেমন কোনো খরচ নেই, যে কারণে পানিফল চাষে খরচের তুলনায় অধিক লাভবান হওয়া যায়।

পানিফল চাষি বিশু ডিলার বলেন, বর্ষার সময় পতিত নিচু জমি, ডোবা, জলাশয়ে পানি ভরা থাকে। সেই জমিতে অল্প খরচে পানিফল চাষ করা হয়। আমার ১০ বিঘা জমিতে পানিফল চাষ করেছি। এক বিঘা জমিতে ১৫-১৬ মণ পানিফল উৎপাদন হয়। প্রায় ১৫ বছর আগে থেকে এ ফল চাষ করছি। কোনোবারই লোকসানে পড়তে হয়নি, প্রতিবছরই লাভবান হয়েছি।

পানিফল বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দেওয়ানগঞ্জ থেকে পানিফল কিনে নিয়ে জামালপুর,  ময়মনসিংহ, নেত্রকোনার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করি। ওসব অঞ্চলে পানিফলের চাষ না থাকায় ওসব অঞ্চলে পানিফলের বেশ কদর রয়েছে। খুচরা বাজারে পাকা পানিফল ৩০ টাকা ও কাঁচা পানিফল ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।

পানিফল হাটের ইজারাদার মনির হোসেন জানান, প্রাত্যহিক এ হাটে ৮-১০ টন পানিফল বিক্রি হয়। জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি, পলাশবাড়ি, কুড়িগ্রাম জেলার  রাজিবপুর, রৌমারি অঞ্চলের শত শত পাইকার এ হাট থেকে পানিফল কিনে নিয়ে যান। বর্তমানে পাকা পানিফল ১৩০০-১৪০০ টাকা মণ আর কাঁচা পানিফল ৫০০-৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। দেওয়ানগঞ্জের পানিফল হাট অক্টোবরের শুরুর দিকে শুরু হয়েছে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত চলবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন মিয়া জানান, পতিত জলমগ্ন জমি, খাল, ডোবা, পুকুর, জলাশয়ে পানিফল চাষ করা যায়। কৃষি অফিস থেকে পানিফল চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়। পানিফল চাষে অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এ অঞ্চলে দিন দিন পানিফল চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।