ঢাকা রবিবার, ০৯ নভেম্বর, ২০২৫

বললেন প্রেস সেক্রেটারি

আওয়ামী লীগের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:১৪ পিএম

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শক্ত ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে হবে। তিনি দলটির সাম্প্রতিক কর্মকা-কে জাতির গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য অস্তিত্বের হুমকি বলে মনে করেন।

গতকাল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ট্রেস কনসাল্টিং আয়োজিত ‘রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের আকাক্সক্ষা নির্বাচনি ইশতেহারে প্রতিফলিত করতে পারে’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

শফিকুল আলম বলেন, ‘শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিষয়ে এখন সবার একটি স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া জরুরি। তিনি এখনো জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রেস সচিব বলেন, ‘তিনি বাংলাদেশের জনগণকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়েছেন। আমি মনে করি, এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অস্তিত্বের হুমকি। একজন মানুষকে যখন ‘সন্ত্রাসী’ বলা হয়, তখন আসলে তাকে হত্যাযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তিনি কি ১৮ কোটি মানুষকে শত্রু ঘোষণা করে আবার ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা করছেন?’

সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খানের বইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘এনায়েতুল্লাহ খান একসময় লিখেছিলেনÑ ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিব ৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে কোলাবরেটরস বা রাজাকার বানিয়েছিলেন, আর এখন তার মেয়ে ১৮ কোটি মানুষকে সন্ত্রাসী বলছেন! এটা কল্পনাতীত।’

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, ‘সরকার ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ নিয়ে কোনো দ্বিধা-সংকোচ থাকা উচিত নয়।’

তিনি বলেন, ‘শাসন ব্যবস্থা ও জুলাই সনদ নিয়ে বিতর্ক সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ। সারা বিশ্বে সংবিধান সংক্রান্ত বিতর্কে সময় লাগে, কখনো তা দশক ধরেও চলে। রাতারাতি কোনো সমাধান চাপিয়ে দেওয়া যায় না।’ আলোচনা এখন হয়েছে, আবার নির্বাচনের পরও হতে পারে বলে মন্তব্য করেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, সুশাসন চায় এবং দুর্নীতিমুক্ত দেশ চায়। ভবিষ্যতে যারা সরকার গঠন করবে, তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ কর্মসংস্থান হবে বলে জানান তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘যদি রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত না নিতে পারে, তাহলে  নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনিশ্চয়তা দূর করতে ম্যান্ডেট অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে অন্তর্বর্তী সরকার।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এখন একটি ফ্র্যাকচারড পলিটিক্যাল সিচুয়েশন দেখছি। এখন ডান, বাম ও মধ্যপন্থি সব পক্ষের অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক সমাধান প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে কিছু কিছু থিঙ্কট্যাংক বলতে চান যে কৃষকের সঙ্গে কথা হয়নি, নারীদের সঙ্গে কথা হয়নি, শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয়নি। আশ্চর্য লাগে, কথাগুলো কেমনে ওনারা বলেন। তাহলে কি যারা রাজনৈতিক দল, যাদের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশন আলোচনা করল, তারা কি কৃষক, নারী, শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করে না?’ তিনি আরও বলেন, ‘এই থিঙ্কট্যাংকগুলো নিজেদের গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য এসব কথা বলে।’

অনুষ্ঠানে আরও অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ট্রেস-এর সিইও ফুয়াদ এম খালিদ হোসেন, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম।

প্যানেল আলোচনায় সঞ্চালনা করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহাব এনাম খান। এতে কূটনীতিক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।