ঢাকা রবিবার, ০৯ নভেম্বর, ২০২৫

মিথ্যা ঘোষণায় ফের এলো গুটি চুল

মাইনুল হক ভূঁইয়া ও দেলোয়ার হোসেন
প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:১৮ পিএম

মিথ্যা ঘোষণা ও ভুয়া এলসিতে বেনাপোল এবং সোনা মসজিদ শুল্ক স্টেশন দিয়ে চোরাই পথে হিউম্যান হেয়ার আমদানি যেন কিছুতেই থামছে না। গত দুই বছর ধরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে অবাধে ভারত থেকে দেশে ঢুকছে এবং খালাস হয়ে যাচ্ছে এই চুল। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। বিষয়টির বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে গত ৫ নভেম্বর ‘শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গুটি চুল খালাসে একটি চক্র’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের দিনই চোরাই পথে এক দফা এবং পরদিন আরেক দফা গুটি চুল ঢুকেছে দেশে।

রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৫ ও ৬ নভেম্বর রাতে আন্ডার ইনভয়েজে, আন্ডার এলসিতে বেনাপোলে ১০ টন এবং সোনা মসজিদ শুল্ক স্টেশনে চার টন হিউম্যান গুটি চুল দেশে ঢুকেছে। ভারত থেকে এই গুটি চুল সড়কপথে এ দুটি শুল্ক স্টেশনের নামে এসেছে। আজ ৯ নভেম্বর রোববার এই ১৪ টন হিউম্যান গুটি চুল খালাস হওয়ার কথা রয়েছে। এবারও সরকার হারাবে মোটা অঙ্কের রাজস্ব। যার এইচএস কোড-০৫০১০০০০।

বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোলে এই হিউম্যান হেয়ার আমদানি করেছে আয়ান এন্টারপ্রাইজ এবং সোনা মসজিদ শুল্ক স্টেশনে এ চুল আমদানি করেছে উত্তরাস্থ হংকং ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন, যার ভ্যাট নং-০০৪১৮৮৭০৩-০১০২, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হলো মানিক অ্যান্ড ব্রাদার্স।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের নামে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের শেরশাহ, যশোর শাখায় এলসি খোলা হয়েছে এবং সোনা মসজিদ শুল্ক স্টেশনের নামে এলসি খোলা হয়েছে সীমান্ত ব্যাংক ঢাকার উত্তরা শাখায়।

মিথ্যা ঘোষণা এবং ভুয়া এলসিতে এভাবেই দিনের পর দিন চোরাই পথে ভারতীয় চুল  বেনাপোল ও সোনা মজসিদ শুল্ক স্টেশন দিয়ে খালাস হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এসব চুল বাংলাদেশে এলসি হয়ে আসার কোনো ডকুমেন্ট ভারতীয় কাস্টমসে থাকে না। মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে ভুয়া এলসিতে সড়কপথে টনকে টন প্রবেশ করছে। ভারতের অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তারা এর সঙ্গে জড়িত বলে সূত্র জানায়। ভারত কাস্টমস হিউম্যান হেয়ার গুটি চুল বাদ দিয়ে রাবার বেজ বা অন্য নামে বাংলাদেশে শিপমেন্টগুলো পাঠিয়ে থাকে। তবে ওপাশে শিপমেন্টের কোনো প্রমাণ রাখে না ভারতীয় কাস্টমস।

তবে এ চুল আমদানির ক্ষেত্রে ভারত সরকারের একটি সার্কুলার রূপালী বাংলাদেশের হাতে এসেছে। 

এভাবে বাংলাদেশে হিউম্যান হেয়ার বা গুটি চুল ব্যবসা করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এ চক্রের হোতা হাদিউজ্জামান মাস্টার। এর সঙ্গে কাস্টমসের অসাধু কর্মকর্তা ও ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, ভারতীয় ডকুমেন্ট ছাড়া এ চুল বাংলাদেশের আমদানিকারক গ্রহণ করেন কেমন করে। সার্বিক বিষয় জানার জন্য রূপালী বাংলাদেশের তরফ থেকে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের  কমিশনার খালেদ মোহাম্মদ আবু হোসেনের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে কল দিলে তিনি কমিশনারের সঙ্গে সংযোগ করে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

তবে আমদানিকারক ও ব্যাংক কর্মকর্তারা চুল আমদানির কথা স্বীকার করেছেন।