ঢাকা রবিবার, ০৯ নভেম্বর, ২০২৫

মারা গেছেন ডিএনএ গঠনের সহ-আবিষ্কারক জেমস ওয়াটসন

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:১৯ পিএম

ডিএনএ-এর গঠন আবিষ্কার করে জীববিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটানো নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন মারা গেছেন। গত বৃহস্পতিবার মৃত্যুকালে ৯৭ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। খবর বিবিসির।

ওয়াটসনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরি। সেখানে তিনি কয়েক দশক গবেষণা করেছেন।

১৯৫৩ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিকের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি ডিএনএ (ডি-অক্সি রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) অণুর ডাবল হেলিক্স গঠন আবিষ্কার করেন, যা ২০শ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত। এই আবিষ্কার পরবর্তী সময়ে আণবিক জীববিজ্ঞানের দ্রুত বিকাশের ভিত্তি স্থাপন করে।

এই আবিষ্কার আধুনিক জীবনের এক নবযুগের সূচনা করে, যা চিকিৎসা, ফরেনসিক ও জেনেটিকসে বিপ্লব ঘটায়। যেমনÑ অপরাধ তদন্তে ডিএনএ পরীক্ষা বা জিনগতভাবে পরিবর্তিত উদ্ভিদ তৈরির প্রযুক্তি। ওয়াটসন মাত্র ২৫ বছর বয়সে এই যুগান্তকারী আবিষ্কারে যুক্ত হন। পরে ক্যান্সার গবেষণা ও মানব জিনোম মানচিত্র তৈরিতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

১৯৬২ সালে ওয়াটসন, ক্রিক ও মরিস উইলকিনস ডিএনএ-এর গঠন আবিষ্কারের জন্য যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান। তবে ডিএনএ-র এক্স-রে চিত্র যিনি প্রথম ধারণ করেছিলেন, সেই রোজালিন্ড ফ্র্যাংকলিনের অবদান তখন স্বীকৃতি পায়নি।

১৯২৮ সালের ৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন জেমস ডিউই ওয়াটসন। ১৫ বছর বয়সে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোতে বৃত্তি পান। ১৯৫০ সালে ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি ব্লুমিংটন থেকে প্রাণিবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। ক্যামব্রিজে গিয়েই ক্রিকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর গড়ে ওঠে এক ঐতিহাসিক অংশীদারত্ব।

লন্ডনের কিংস কলেজে গবেষণা চলাকালে রোজালিন্ড ফ্র্যাংকলিন ও মরিস উইলকিন্সের তোলা এক্স-রে ইমেজের ভিত্তিতে ওয়াটসন ও ক্রিক ডিএনএর দ্বি-হেলিক্স কাঠামো বিশ্লেষণ শুরু করেন। প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয়বার ফ্র্যাংকলিনের একটি এক্স-রে ইসেল মূলসূত্র, যা তারা তার অজ্ঞাতসারেই পেয়েছিলেন। এরপর সেটি মূল চাবিকাঠি হয়ে ওঠে। তাদের মডেলটি ডিএনএ’র দ্বি-হেলিক্স কাঠামোর গঠন তুলে ধরে, যা দেখতে বেঁকে যাওয়া মই (টুইস্টিং ল্যাডার)-এর মতো।

তবে বর্ণ ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে এক বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে ওয়াটসনের খ্যাতি মারাত্মকভাবে ক্ষুণœ হয়। তিনি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন, কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গদের গড় বুদ্ধিমত্তা জিনগতভাবে আলাদা। তার ওই বক্তব্য পরে বৈজ্ঞানিক মহল তীব্রভাবে নাকচ করে।

২০০৭ সালে ওয়াটসন আফ্রিকানদের বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার পর চাকরি হারান। ২০১৯ সালে একই ধরনের বক্তব্য পুনরাবৃত্তির পর তাকে ল্যাবরেটরির সব ধরনের সম্মানসূচক পদ থেকেও অপসারণ করা হয়।

১৯৮৮ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথের অধীনে মানব জিনোম প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন তিনি। ওয়াটসনের স্ত্রীর নাম এলিজাবেথ। রুফাস ও ডানকান নামে তার দুই ছেলে রয়েছে। তিনি বহু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন। তিনি বই লিখেছেন এবং নানা সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

তাকে নিয়ে বিবিসি একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করে। এতে ওয়াটসনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন জেফ গোল্ডব্লাম।