মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি করা খসড়া তালিকা দিয়ে পদোন্নতি দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ফলে বিগত সরকারের কর্মকর্তাদের বিরাগভাজন অনেকেই এই তালিকায় বঞ্চিত হচ্ছে। এ নিয়ে মাউশির কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ।
সূত্র জানায়, সহকারী শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি দিতে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১) বেগম বদরুন নাহারের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বলা হয়, জ্যেষ্ঠতা তালিকায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিরি নিশ্চিত করতে হবে। যথাযথ হালনাগাদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া হলে কেউ বঞ্চিত হতে পারেন বলেও সতর্ক করা হয়। এরপর এক চিঠির মাধ্যমে জ্যেষ্ঠতা তালিকা সংশোধন, সংযোজন-বিয়োজন ও হালনাগাদ করার জন্য ১০ কর্মদিবসের মধ্যে আবেদন আহ্বান করা হয়। এই হালনাগাল যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায়ই মাউশির কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন, বেলাল, নজমুল ইসলামসহ একটি সিন্ডিকেট পুরোনো খসড়া তালিকাটি বর্তমানে রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিজির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
মাউশির সাধারণ প্রশাসন শাখার উচ্চমান সহকারী শাহাদৎ হোসেন এই পদোন্নতির দাপ্তরিক কাজে জড়িত আছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজেই পদোন্নতিপ্রত্যাশী হওয়ায় প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে নানা কৌশল গ্রহণ করেছেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি মাত্র তিন দিনের মধ্যে ২৭৭ জনের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করেন, যেখানে সিন্ডিকেটভুক্ত ৮৬ জনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। পদোন্নতিপ্রত্যাশী অনেকের অভিযোগ করছেনÑ অন্য কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় নথি (এসিআর, প্রত্যয়নপত্র, স্থায়ীকরণ কাগজপত্র) ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী এই খসড়া তালিকা ওয়েবসাইট বা নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ফলে পদোন্নতি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মাউশির একজন পরিচালক বলেন, মানহীন ও কালো তালিকাভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সনদধারী কর্মকর্তারাও এবার পদোন্নতির তালিকায় স্থান পেয়েছেন, যা সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত।
সূত্র জানায়, এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ২৭৭ জনের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে ১৩ ও ১৪ গ্রেডে কর্মরত। পদোন্নতি পেলে তারা সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাবেন। এর আগে, গত বছরও একইভাবে অনিয়মিত জ্যেষ্ঠতা তালিকা ব্যবহার করে পদোন্নতির চেষ্টা করা হলে আদালত তা স্থগিত করে দেয়।
এ প্রসঙ্গে মাউশির ডিজি প্রফেসর বি এম আব্দুল হান্নানকে মুঠোফোনে কল দিলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে কল কেটে দেন। পরবর্তী সময়ে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) বেগম বদরুন নাহার বলেন, তালিকা আসুক। আমরা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখব। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়মকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে স্পষ্ট মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা। প্রসঙ্গত, প্রেরিত তালিকাটি একটি খসড়া তালিকা, এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।

