ঢাকা সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫

সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি ইস্যু

রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি সড়ক অবরোধ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ১১:৪৫ পিএম

ঢাকার সরকারি ৭ কলেজকে একীভূত করে প্রস্তাবিত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ ইস্যুতে গতকাল রোববার রাজধানীতে পাল্টাপাল্টি সড়ক অবরোধ করেছেন কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা। ইউনিভার্সিটির চূড়ান্ত অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে সচিবালয় সংলগ্ন শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীদের একাংশ। শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ প্রস্তাবিত ইউনিভার্সিটির স্কুলিং মডেলভিত্তিক খসড়া অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে। শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি সড়ক অবরোধে দিনভর রাজধানীজুড়ে দেখা দেয় তীব্র যানজট। চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় রাজধানীবাসীকে।

প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির কাঠামো বাতিল ও ৭ কলেজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিক বিক্ষোভ করছেন ঢাকা কলেজসহ একাধিক কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। প্রস্তাবিত ইউনিভার্সিটির স্কুলিং মডেলভিত্তিক খসড়া অধ্যাদেশ ভবিষ্যতে কলেজগুলোর উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রমে অনিশ্চয়তা তৈরি করবে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। এর প্রতিবাদে গতকাল তারা রাজধানীর শাহবাগ মোড় প্রায় ১ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। 

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়ার পর রাজধানীর এই ব্যস্ততম মোড়ে যান চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়। এর আগে সকাল ১১টার পর ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাব মোড়ে জড়ো হন। পরে সরকারি বাংলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, শহিদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে শাহবাগে এসে প্রধান সড়কে অবস্থান নেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি হলে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোর উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে এবং কলেজগুলোর দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই স্কুলিং মডেল বাতিল করে উচ্চ মাধ্যমিকের বিদ্যমান কাঠামো বহাল রাখতে হবে। অন্যথায় আরও কঠোর কর্মসূচিতে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিলেন। তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।’

অন্যদিকে ইউনিভার্সিটির চূড়ান্ত অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে গতকাল দুপুর থেকে রাজধানীর শিক্ষা ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন ৭ কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের একদল শিক্ষার্থী। তারা অধ্যাদেশ জারির দাবিতে নানা স্লোগান দেন। রাত ৮টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলছিল।

পুলিশের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও শিক্ষার্থীরা তা নাকচ করে দেন। শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির কারণে সচিবালয় অভিমুখে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ফলে এই পথ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

গতকাল দুপুর ১টার দিকে শিক্ষা ভবনের সামনে বসে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘উই ওয়ান্ট, উই ওয়ান্ট, অর্ডিন্যান্স, অর্ডিন্যান্স’, ‘সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে, আগুন জ্বালো’, ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’, ‘টালবাহানা বন্ধ করো, অধ্যাদেশ জারি করো’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের জানান, ‘শিক্ষার্থীরা চাইলে সরাসরি সচিবালয়ে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে নিজেদের দাবি-দাওয়ার সর্বশেষ আপডেট নিতে পারবে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সার্বিক বিষয়ে তোমরা সচিবালয়ে নিজেরাই গিয়ে জানতে পারো কী অগ্রগতি হয়েছে। তোমাদের যদি কোনো বক্তব্য থাকে, সেটাও দিয়ে আসতে পারো। এতে জনদুর্ভোগও কমবে। এখানে মোড়ে পাঁচ ঘণ্টার মতো অবস্থান চলছে, এতে জনভোগান্তি বাড়ছে।’

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা পুলিশের দেওয়া আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমরা কোনো আলোচনায় যাচ্ছি না। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’

অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা কোনো এসিরুমে আলোচনায় বসব না। সচিবালয়েও যাব না। আমাদের দাবি একটাই, তা হলোÑ দ্রুত সময়ের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। দ্রুত সময়ে অধ্যাদেশ জারি না করলে আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলন গড়ে তুলব।’

এর আগে দুপুরে শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়ে জড়ো হন। পরে একযোগে স্লোগান দিতে দিতে শিক্ষা ভবনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষা ভবনের নিরাপত্তা জোরদার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শিক্ষা ভবনের মূল ফটকের প্রবেশদ্বারে দেওয়া হয় ব্যারিকেড।

শিক্ষার্থীদের দাবি, দ্রুত ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। প্রস্তাবিত ইউনিভার্সিটির খসড়া আইন শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশ করলেও এখনো চূড়ান্ত অধ্যাদেশের কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এতে পরিচয় সংকট, অ্যাকাডেমিক অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী।

৭ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের অর্গানাইজিং উইং থেকে গত শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত আইনটির ওপর অনলাইনে মতামত নেওয়া হলেও তিন দফা বৈঠকের পরও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে।