পরিবেশ রক্ষায় গ্রিন এনার্জি এবং জ্বালানি খাতে ব্যয় সাশ্রয়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ। ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় সাশ্রয় করা যাবে এবং সবুজ শক্তি বা গ্রিন এনার্জির দিকে দেশ এগিয়ে যাবে।
দেশের পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে ওপেক্স মডেলে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ)। গতকাল মঙ্গলবার ইউজিসি অডিটোরিয়ামে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ইউজিসি চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। চুক্তির আওতায় ২০২৬ সালের মধ্যে ৩২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ওপেক্স মডেলে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ক্রমে এর কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোকে সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন প্রকল্পে যুক্ত করার পারামর্শ দেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে বিদ্যুতের সংকট রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হতে পারে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া তিনি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কেও পর্যায়ক্রমে এই প্রকল্পে যুক্ত করার পরামর্শ দেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, প্রফেসর ড. মাছুমা হাবিব এবং প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আইয়ূব ইসলাম। ইউজিসি সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম এবং ডিআইইউর রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ নাদির বিন আলী নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।
ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডিআইইউর উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আর কবির ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. শামসুল আলম বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক ড. মো. সুলতান মাহমুদ ভূইয়াসহ কমিশন ও ডিআইইউর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডিআইইউর উপাচার্য প্রফেসর এম আর কবির বলেন, গ্রিন এনার্জির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। দেশের জ্বালানি সংকট সমাধানে শিক্ষক ও গবেষকরা গবেষণা পরিচালনা করতে পারেন। ওপেক্স মডেলের আওতায় সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রুপটফ যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
চুক্তির আওতায় ওপেক্স মডেলে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে কোনো অর্থ ব্যয় করতে হবে না। ওপেক্স মডেলে বিনিয়োগের জন্য ১৩টি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হয়েছে। ডিআইইউ টেকনিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট, সাইট সার্ভে ও সমীক্ষা পরিচালনা করবে এবং অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউজিসির সাথে এসব বিষয়ে তথ্য বিনিময় করবে। এ ছাড়া, সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত জুন মাসে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল বসিয়ে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা দেন। এ ছাড়া, সরকারি ভবনে সোলার প্যানেল বসানোর কাজটি বেসরকারি উদ্যোগে করা যায় কি না সে ব্যাপারে বিবেচনা করার জন্য তিনি পরামর্শ দেন।