গাজায় চলমান যুদ্ধ আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হতে পারে বলে দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দাবি, আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এ যুদ্ধের ‘চূড়ান্ত সমাধান’ হতে পারে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ এ তথ্য জানিয়েছে।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার ধারণা, আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যেই বিষয়টির একটি চূড়ান্ত সমাধান হবে। এখন সবাই গাজা সিটির কথা বলছে। সব সময়ই কিছু না কিছু নিয়ে আলোচনা হয়, তবে একসময় এটি মীমাংসা হবেই। দ্রুতই মীমাংসা করা উচিত।’
যুদ্ধ বন্ধে বড় ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা চলছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি নেতানিয়াহুর সঙ্গে নিয়মিতই যোগাযোগ রাখি। আমরা ইরানের পারমাণবিক হুমকি দূর করতে সফল হয়েছি।’ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাস হামলা ইতিহাস থেকে মুছে যাবে না মন্তব্য করে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটা শেষ হতেই হবে, তবে মানুষ ৭ অক্টোবরকে ভুলবে না।’
গাজায় চলমান মানবিক সংকট প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী পাঠাচ্ছে। অনেক মানুষকে খাওয়াচ্ছি। তবে এত বিপুলসংখ্যক মানুষকে সহায়তা করাও বড় চ্যালেঞ্জ।’ এ সময় পাশে থাকা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘আমরা চাই যুদ্ধ শেষ হোক। তবে এটি অবশ্যই এমনভাবে শেষ হতে হবে, যাতে হামাস আর গাজা শাসন করতে না পারে।’
এদিকে, গত সোমবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলের নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন সাংবাদিকও আছেন। ঘটনার পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একে ‘দুর্ভাগ্যজনক ভুল’ আখ্যা দিয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। হামাসকে পরাজিত করে জিম্মিদের মুক্ত করা অন্যতম লক্ষ্য মন্তব্য করে তিনি জানান, এ হামলার ঘটনা সেনাবাহিনী তদন্ত করছে।
এদিকে পাঁচ সাংবাদিকসহ ২০ জন নিহতের ঘটনায় তেল আবিবের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় বইছে বিশ্বজুড়ে। এরই মধ্যে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। নিন্দা জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুকে দ্রুত যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আহ্বান জানান। এ ছাড়া এ ঘটনাকে বর্বর উল্লেখ করে নিন্দা ও শোক জানিয়েছে কানাডা, ইরান, সৌদি আরব, তুরস্কসহ অনেক মানবাধিকার সংস্থা। এ ছাড়া শোক জানিয়েছে কানাডা, মিশর, ইরান ও সৌদি আরব সরকার। হাসপাতালে হামলার ঘটনায় নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে নাখোশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও।
ট্রাম্প বলেন, ‘গাজায় এ ধরনের ঘটনায় খুবই অখুশি। এর পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। বন্দিদের মুক্তির চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে হামাসের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’ সাংবাদিক হত্যার ঘটনা পুরো বিশ্বকে যখন নাড়িয়ে দিয়েছে, তখন এ ঘটনায় স্বচ্ছ তদন্তের কথা জানিয়েছেন আইডিএফ মুখপাত্র এফি ডেফরিন। তিনি বলেন, ‘বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইচ্ছাকৃত হামলা চালায়নি, নিরাপত্তার স্বার্থেই সেখানে হামলা চালানো হয়েছে।’
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে ৬১ ফিলিস্তনি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে নিহত আরও ২৪ জন। প্রথম দফা হামলার খবর সংগ্রহে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে জড়ো হলে এর কয়েক মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় দফায় হামলা হয়। এতে নিহত হন আল-জাজিরা, এপি, রয়টার্স, এনবিসির পাঁচ সাংবাদিকসহ বেসামরিক ফিলিস্তিনিরাও। এদিকে, হামাসের হাতে বন্দিদের মুক্তির দাবিতে গতকাল ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে ইসরায়েল জুড়ে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন