ঢাকা বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ডাকসু নির্বাচনে অনিয়ম 

প্রশাসনের বিরুদ্ধে গড়িমসির  অভিযোগ আবিদ-কাদেরের

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫, ১১:১৮ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে নানা অসংগতি থাকলেও প্রশাসন তা নিয়ে ‘গড়িমসি’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আবিদুল ইসলাম খান, আবদুল কাদের ও উমামা ফাতেমা। 

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা প্রশাসনের কাছে নির্বাচন সম্পর্কিত কয়েকটি বিষয়ে জানতে চান। এ সময় প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা শেষে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, নির্বাচনের আগে ৭ সেপ্টেম্বর গাউসুল আজম মার্কেটের একটি ছাপাখানায় ডাকসু নির্বাচনের ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তারা প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য চেয়েছেন। তারা আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচনে যে পরিমাণ ভোটার টার্নআউট দেখানো হয়েছে, তারা সেই পরিমাণ উপস্থিতি মাঠে দেখতে পাননি। তাই তারা ভোটারদের স্বাক্ষর তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া নির্বাচন সম্পর্কিত নানা অসংগতি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে তাদের।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন ডাকসুর স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী উমামা ফাতেমা, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী আবদুল কাদের প্রমুখ।

আবদুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ডাকসু নির্বাচনের আগে-পরে তারা নানা সংশয়ের কথা বলেছেন। প্রার্থীরা, প্যানেল সদস্যরা, সাধারণ শিক্ষার্থীরাÑ সবাই তাদের সংশয় প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। নির্বাচনের পরেও তারা উদ্বেগ জানিয়েছেন। তারা স্পষ্ট করে বলেছেন, নির্বাচিত প্রার্থীদের নিয়ে তাদের কোনো সমস্যা নেই। তাদের উদ্বেগ নির্বাচন কমিশন ও তাদের কার্যক্রম নিয়ে।

প্রার্থীরা কয়েকটি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন আবদুল কাদের। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেমনÑ ব্যালট পেপার গাউসুল আজম মার্কেটে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে ছিল। এটা ভয়াবহ উদ্বেগজনক। ভোটার উপস্থিতির তালিকা তারা দেখতে চেয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়গুলো নিয়ে প্রশাসনের অনীহা সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা চান না, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণœ হোক। তবে প্রশাসন গড়িমসি করলে শিক্ষার্থীদের মনে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, ভবিষ্যতে তা আরও সমস্যা তৈরি করবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা না হলে এই নির্বাচন ইতিহাসে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।

উমামা ফাতেমা সাংবাদিকদের বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ইতিহাসে যখন বিচার-বিশ্লেষণ হবে, তখন এই ৯ সেপ্টেম্বরের ডাকসু নির্বাচন নিয়ে নানা বিশ্লেষণ হবে। এই নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের অনেকে নানা উদ্বেগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন। বিভিন্ন প্যানেল থেকেও আবেদন করা হয়েছে। লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু এসব বিষয় পরিষ্কার করতে প্রশাসনের গড়িমসি তারা লক্ষ করছেন।

উমামা ফাতেমা বলেন, প্রথমত, ব্যালট পেপার গাউসুল আজম মার্কেটে পাওয়া গেছে। দ্বিতীয়ত, ভোটার উপস্থিতির তালিকার বিষয়ে একাধিকবার লিখিতভাবে বলা হলেও তা দেওয়া হয়নি। তারা উপাচার্য ও প্রক্টরের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। নির্বাচন হয়ে গেছে ১৫ দিন। তবু প্রশাসন আন্তরিকভাবে এসব বিষয়ে সমাধান না করে গড়িমসি করছে।
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা সবাই রাষ্ট্রের স্বার্থে বেড়ে উঠেছি। আমাদের কাছে জয়-পরাজয় বলতে কিছু নেই।

আমরা লড়াই করেছি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য। আমরা সুস্থ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার চর্চা করতে চেয়েছি। তাই নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে অনিয়ম-অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আমরা কোনো আন্দোলন, অবরোধ বা মিছিলে যাইনি, বরং নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই অভিযোগগুলোর বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাইনি।’ এ ছাড়া গাউসুল আজমের নিচতলায় অরক্ষিত অবস্থায় ব্যালট পেপার পাওয়ায়  উদ্বেগ প্রকাশ করেন  আবিদুল ইসলাম খান।