- ১২ লাখ টাকায় চাকরির নিশ্চয়তা
- ভুয়া মেজর ও কর্নেলসহ গ্রেপ্তার ৬
গাজীপুরের সফিপুর আনসার ব্যাটালিয়ন একাডেমিতে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়েন এক অংশগ্রহণকারী। এর কিছু দিন পর মেজর পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তি মোবাইল ফোনে জানায় অংশগ্রহণকারীর কিছু শারীরিক সমস্যা আছে। সেই সমস্যার সমাধান করে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে অংশগ্রহণকারীর কাছে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। এরপর ভুক্তভোগীর পরিবারের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় একটি ভুয়া নিয়োগপত্র। আর এভাবেই ভুয়া সেনা কর্মকর্তা সেজে চাকরি দেওয়ার নামে কোটি কোটি হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এমনই এক প্রতারক চক্রের মূল হোতাসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪। গত সোমবার মধ্য রাতে ঢাকা ও সাভারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ভুয়া মেজর হলেন সোহেল রানা ওরফে মিলন, ভুয়া কর্নেল তৈয়ব ওরফে মোস্তাক। তাদের সঙ্গে ধরা পড়া চার সহযোগী হলেন- মো. সজীব মুন্সি, শামীম আহমেদ, মো. মওলাদ আলী খান এবং সোহেল রানা ওরফে জিন্নাহ। তাদের কাছ থেকে একটি প্রাইভেট কার, ৭টি মোবাইল ফোন, দুটি ভুয়া নিয়োগপত্র এবং নগদ ৯৫ হাজার ২০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারক চক্রটি অসংখ্য তরুণকে ফাঁসিয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন নিজেদের সেনাবাহিনীর মেজর ও কর্নেল পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে আসছিল। একই ধরনের অপরাধে এ চক্রের সদস্যরা র্যাব-৪-এর হাতে দুবার গ্রেপ্তারও হয়েছিল। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে আবারও তারা একই কৌশলে প্রতারণা শুরু করে।
জানা গেছে, গত কয়েক দিন আগে সোহেল রানা নামের এক ব্যক্তি র্যাব-৪-এ একটি অভিযোগ করেন। তিনি অভিযোগে জানান, তার আপন ছোট ভাই রাজু গত ১৪ সেপ্টেম্বর সফিপুর আনসার ব্যাটালিয়ন একাডেমিতে নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ পড়ে। পরবর্তী সময়ে প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েন তারা।
র্যাব-৪-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম জানান, ১৪ সেপ্টেম্বর সফিপুর আনসার ব্যাটালিয়ন একাডেমিতে সিপাহি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় বাদ পড়েন এক প্রার্থী। এ সময় তার ভাইয়ের কাছে ফোন আসে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির কাছ থেকে। ফোনে ওই ব্যক্তি নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর সোহেল পরিচয় দিয়ে জানায়, কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে তার ভাই বাদ পড়েছে, তবে টাকা দিলে চাকরি নিশ্চিত করে দিতে পারবে। এরপর ঢাকার শাহ আলী থানার একটি হোটেলে ভুক্তভোগীর সঙ্গে দেখা করে ওই ভুয়া মেজর সোহেল রানা।
সঙ্গে ছিল আরেক প্রতারক তৈয়বুর রহমান, যাকে ভুক্তভোগীর কাছে সেনাবাহিনীর কর্নেল পরিচয় করানো হয়। তারা চাকরি দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে ১২ লাখ টাকা দাবি করে। ভুক্তভোগী রাজি হয়ে প্রথমে একটি প্রাইভেট ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৪ লাখ টাকা জমা দেয়। টাকা নেওয়ার পর চক্রটি একটি ভুয়া নিয়োগপত্র হাতে তুলে দেয় এবং বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে আরও এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
র্যাব জানায়, বাড়িতে এসে ভুক্তভোগী তার ভাইয়ের নিয়োগপত্রটি অন্য একজন প্রকৃত প্রার্থীর নিয়োগপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন। তখনই গরমিল ধরা পড়ে। সন্দেহ হলে দ্রুত তিনি র্যাব-৪ এর কাছে অভিযোগ জানান। অভিযোগ পেয়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চক্রটির অবস্থান শনাক্ত করে র্যাব। এরপর সোমবার মধ্যরাতে ঢাকা ও সাভারের বিভিন্ন স্থানে একযোগে অভিযান চালানো হয়। এতে প্রতারণা চক্রের মূল হোতাসহ ৬ সদস্য ধরা পড়ে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা অভিযোগ স্বীকার করেছে। এদের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার আসামিরা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মহানগরীতে অবস্থান করে বিভিন্ন জেলার চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে টাকার মাধ্যমে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।