ঢাকা সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫

অ্যানথ্রাক্স সতর্কতায় সুন্দরগঞ্জে মাইকিং

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৫, ১০:৫৮ পিএম

সুন্দরগঞ্জের বেলকা ইউনিয়নের পল্লিতে অ্যানথ্রাক্স রোগে আক্রান্তরা সরকারিভাবে চিকিৎসা সহযোগিতা পেলেও যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তারা। শরীরের বিভিন্ন অংশে পচন দেখে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে সামাজিকভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি গ্রামজুড়ে মানুষের চোখে-মুখে এখন আতংকের ছাপ। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশে প্রতিবেদন প্রকাশের পর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ নড়েচড়ে বসেছে। কর্মকর্তারাও গেছেন আক্রান্ত এলাকায়।

বেলকা কিশামত সদর গ্রামের ১১ ব্যক্তির শরীরে অ্যানথ্রাক্স রোগে দগদগে ঘা ও পচন দেখে অনেকেই গত শুক্রবার সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধায় এসে রাবেয়া ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। তারা হাসপাতালেও ভর্তি হননি। চিকিৎসকরা আশ^স্ত করলে কয়েকজন ব্যথা-বেদনা আর ঘা নিয়ে আতংকগ্রস্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে যান। তবে অসুস্থতার কারণে ঘরে তাদের শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তারা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না বলে জানান।

এই গ্রামের মোজাফ্ফর মিয়া জানান, হাতে-পায়ের ব্যথায় চলতে-ফিরতে পারছেন না; স্বাভাবিক কামকাজ তো দূরের কথা, মানুষের নানা কথায় তিনি আরও বেশি কাবু হয়ে পড়েছেন। তার হাতে-পায়ে ফোসকা পড়েছে, চামড়ায় ঘা হয়েছে। বাড়ির লোকজনও সহজে কাছে আসতে চায় না। তাদের ধারণা এই রোগ ছোঁয়াচে। কাছে গেলে যদি আক্রান্ত হয় সে জন্য ঘরের বউ পর্যন্ত কাছে আসতে চায় না। দূর থেকে খাবার দিয়ে সরে যায়। কী যে মুশকিলে পড়েছেন তিনি তা বোঝাতে পারবেন না। তার অভিযোগ, অসুস্থ গরু জবাই করাটা অন্যায় হয়েছে। গরুর মালিক জেনে-শুনে অসুস্থ গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করেছেন। তার অপরাধের জন্য বিচার হওয়া উচিত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুলছাত্রের হাতে ও কনুইয়ে ফোসকা পড়েছে। অসহ্য যন্ত্রণা হয়। বাড়ি থেকে বের হলে এলাকার লোকজন তার কাছে আসতে চায় না। প্রাইভেট শিক্ষক তাকে বলেছে, এ অবস্থায় তোমার পড়ালেখা কয়েকদিন বন্ধ রাখতে হবে। তিনিও তার কাছে আসতে রাজি নয় বলে এই কথা জানিয়ে দিয়েছেন।

বন্ধুরা তাকে বলেছে, এসব খারাপ অসুখ। ভালো না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হওয়ার দরকার নাই। চা-স্টলে গেলে চায়ের দোকানি সফিকুল ইসলামকে চা খেতে দেয়নি। তার ধারণা, চা খেতে দিলে যদি অন্য কাস্টমার দোকানে আর না আসে। তবে গ্রামের অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্তরা বলেন, গরুর মালিক মাহবুবর রহমান জেনে-বুঝে এই অন্যায় কাজ করেছেন। আগে জানলে আমরাও এই অসুস্থ গরুর মাংসের ধারেকাছে যেতাম না। দৈনিক রূপালী বাংলাদেশে খবর ছাপা হওয়ার পর সুন্দরগঞ্জের প্রশাসনিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে অনেকেই ছুটে গেছেন রোগীদের পাশে। তারা স্থানীয় চেয়ারম্যান ও লোকজনকে সচেতন করতে আলোচনা করেছেন। চলছে সতর্কতামূলক মাইকিং। 

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজ কুমার বিশ^াস বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ যৌথভাবে সারা উপজেলায় সতর্কতামূলক মাইকিং করছে।

গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা. মো. রফিকুজ্জামান বলেন, যারা চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন তাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। এটি কোনো ছোঁয়াছে রোগ নয়। কাজেই ভয় পেয়ে আক্রান্তদের দূরে সরিয়ে দিলে তারা মানসিক সমস্যায় ভুগবেন। তাদের চিকিৎসা চলছে এবং গ্রামের লোকজনকে সচেতন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।