ঢাকা বুধবার, ০৮ অক্টোবর, ২০২৫

সিলেটে দুর্ঘটনার কবলে উদয়ন  এক্সপ্রেস, আহত ১৫

সিলেট ব্যুরো
প্রকাশিত: অক্টোবর ৮, ২০২৫, ১২:০৪ এএম

সিলেটে বড় ধরনের ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছে উদয়ন এক্সপ্রেস। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি গতকাল মঙ্গলবার সকালে সিলেটের মোগলাবাজার স্টেশনের ক্রসিং লাইনে প্রবেশের পরপরই দুর্ঘটনাকবলিত হয়। এতে রেলের ইঞ্জিন ও সামনে থাকা ক্যান্টিন বগিসহ ৩টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ সময় গতি কম থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় ট্রেনটি। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হওয়ার দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে রেল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, আহতের সংখ্যা ৭। তারা নিজেদের মতো চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

এদিকে উদয়ন এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠন করা হয়েছে দুটি কমিটি। গতকাল দুপুরে কর্মকর্তা বরখাস্ত ও কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

স্থানীয়রা ঘটনার জন্য ত্রুটিপূর্ণ রেললাইনকে দায়ী করেছেন। যদিও প্রশাসন কারণ নিয়ে তদন্তের আগে কিছু বলতে রাজি নয়। দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উর্মি রায় বলেন, ঘটনার কারণ এখনই বলা যাচ্ছে না। এটি তদন্তসাপেক্ষ ব্যাপার। তদন্তের পরই বলতে পারব কেন দুর্ঘটনা ঘটেছে।  ঘটনার খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সিলেটের জেলা প্রশাসক সরওয়ার আলম। ঘটনার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি যাচাইয়ে প্রশাসনের তৎপরতা চলছে বলে সে সময় মন্তব্য করেন তিনি। 

এক প্রত্যক্ষদর্শী এ প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, ট্রেনচালক (ড্রাইভার) ক্লান্ত ও ঝিমুনির মধ্যে ছিলেন। যার ফলে তিনি আউটার সিগন্যাল না দেখেই ট্রেন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে রেলওয়ের প্রাথমিক তদন্তে দুর্ঘটনার পেছনে ত্রুটিপূর্ণ রেল ক্রসিং লাইন ও বৃষ্টির কারণে মাটি দুর্বল হয়ে যাওয়াÑ এই দুটি অবকাঠামোগত কারণ চিহ্নিত করেছে।

ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী হাসান মিয়া বলেন, ট্রেন ধীরে চলছিল ঠিকই; কিন্তু চালকের চোখে ঘুমঘুম ভাব ছিল। আউটার সিগন্যাল জ্বলা থাকা সত্ত্বেও সে থামেনি। বৃষ্টি হওয়ার কারণে মাটি নরম ছিল, আর ক্রসিংয়ের রেললাইন সঠিকভাবে যুক্ত ছিল না। তখন হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। রেলওয়ে সূত্র বলছে, চালকের ক্লান্তি ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব থাকতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই ক্রসিংয়ের রেললাইন জয়েন্টে ঠিকমতো সংযোগ না থাকার পাশাপাশি ভারী যানবাহনের চাপ ও বৃষ্টির কারণে মাটি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এ কারণে ট্রেনটি ক্রসিং অতিক্রমের সময় লাইন থেকে বেরিয়ে পড়ে।

দুর্ঘটনার সময় ট্রেনে ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সাস্ট) প্রায় ৫০-৬০ জন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী। তারা জানান, লাইনচ্যুতির সময় সবাই আতঙ্কিত হলেও, গুরুতর কেউ আহত হননি। দুর্ঘটনার পর আশেপাশে পরিবহনের অভাবে শিক্ষার্থীরা সিলেটে ফিরে যেতে সমস্যায় পড়েন। এই পরিস্থিতিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাৎক্ষণিকভাবে একটি বাস দুর্ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। বাসটি শিক্ষার্থীদের নিরাপদে ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে সাহায্য করে।

মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি মোগলাবাজারের মেঘনা তেল ডিপোর কাছে পৌঁছালে ইঞ্জিনসহ ৩টি বগি লাইনচ্যুত হয়। দুর্ঘটনার পর সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ ছিল। কুলাউড়া থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে রেল যোগাযোগ পুনরায় স্বাভাবিক হয়।

সিলেট রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম বলেন, দ্রুত উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হওয়ায় রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তারা দ্রুত রিপোর্ট দেবে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ক্রসিং লাইনটির দুর্বল অবস্থা ও বৃষ্টির কারণে মাটি নরম হয়ে যাওয়ার ফলে উদয়ন এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়েছে।

মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামসুল হাবিব জানান, রেলওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশের সমন্বয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান চলছে।