ঢাকা রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫

গুম-খুন ইস্যুতে ডাকসুর বিবৃতি

চিহ্নিত অপরাধীদের ‘সেইফ  এক্সিট’ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে  ছাত্রসমাজ সোচ্চার থাকবে

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২৫, ১১:৪৩ পিএম

গুম-খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা ও তার ফ্যাসিবাদী প্রশাসনের সব সদস্যের দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। ডিজিএফআই, র‌্যাবসহ সংশ্লিষ্ট সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব কর্মকর্তা এ অপরাধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীদের এই প্ল্যাটফর্ম।

গতকাল শনিবার ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম, জিএস এস এম ফরহাদ এবং এজিএস মহিউদ্দিন খান এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। একই সঙ্গে চিহ্নিত অপরাধীদের ‘সেইফ এক্সিট’ বা দায়মুক্তি দেওয়ার যেকোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ সোচ্চার থাকবে বলেও জানান তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার সময় ছিল বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামল। সেই সময়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত গুম, খুন, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। গুম কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী এরই মধ্যে ১ হাজার ৮০০-এর অধিক গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে, যার শিকার হয়েছেন সাধারণ নাগরিক, শিক্ষার্থী, নারী, শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। এমনকি শিশুরাও এই নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পায়নি।

এতে বলা হয়, বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষার্থী এই গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন। তাদের অনেককে রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে আটক, নির্যাতন ও গুম করা হয়েছে। এখনো অনেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা-ও আমরা জানি না।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গুম কমিশনের প্রতিবেদনে আরও উদ্বেগজনকভাবে উঠে এসেছে যে গুম-খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধে একটি পার্শ্ববর্তী দেশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততা ছিল। বিষয়টি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি এক গভীর হুমকি।

এতে বলা হয়, এই গুম-খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য কেবল স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার রাজনৈতিক মহলই দায়ী নয়, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সংস্থা ও সংস্থাগুলোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। ‘আয়নাঘর’সহ গোপন বন্দিশালায় চালানো অমানবিক নির্যাতন সভ্য সমাজে লজ্জাজনক ও নিন্দনীয়। রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে অসংখ্য নাগরিককে জোরপূর্বক গুম করে ফেলা, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো এবং তাদের ‘জঙ্গি’ হিসেবে প্রচার করা ছিল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের একটি পরিকল্পিত কৌশল।

বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং একটি সংস্থার প্রধানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গুম, গোপন আটক ও নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এই পদক্ষেপ গুম ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের দীর্ঘদিনের বেদনা-বিক্ষোভে কিছুটা আশার আলো জাগিয়েছে। কিন্তু এটি যথেষ্ট নয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গুম-খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা ও তার ফ্যাসিবাদী প্রশাসনের সব সদস্যের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। র‌্যাবসহ সংশ্লিষ্ট সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব কর্মকর্তা এ অপরাধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। গুম কমিশনের তদন্তকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানদ- অনুসারে পরিচালনা করতে হবে, যাতে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ন্যায়বিচার পায়। চিহ্নিত অপরাধীদের ‘সেইফ এক্সিট’ বা দায়মুক্তি দেওয়ার যেকোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ সোচ্চার থাকবে।