দেশে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৩০ শতাংশ মানুষ বৃদ্ধ হবে। এই বাস্তবতা সামনে রেখে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর পরিচর্যায় এখনই পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও আয়াত এডুকেশন ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তারা। আয়াত এডুকেশন ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন তাহসিন আমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রথম দীর্ঘমেয়াদি পরিচর্যার দেশগত নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। যে প্রতিবেদনে একটি সাশ্রয়ী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জেন্ডার সংবেদনশীল যতœব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রমাণভিত্তিক দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একটি রূপান্তরমূলক দীর্ঘমেয়াদি যতœব্যবস্থা গড়ে তোলার পথরেখা নির্ধারণের লক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সরকারের নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও সুশীল সমাজের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর ইতিমধ্যে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আমাদের এখন এসব কর্মসূচি কে একটি বৃহত্তর যতœব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে, যাতে প্রবীণেরা শুধু ভাতা নয়, প্রকৃত যতœ ও সহায়তা পান। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নীতিমালা আছে, কিন্তু শুধু আর্থিক সহায়তা যথেষ্ট নয়। এখনই সময় একটি সমন্বিত যতœব্যবস্থা গড়ে তোলার, যেখানে প্রশিক্ষিত যতœদাতা, টেকসই অর্থায়ন এবং সবার জন্য সমান সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।’
অনুষ্ঠানে এডিবির প্রিন্সিপাল সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট (সোশ্যাল ইনক্লুশন) ফ্রান্সেস্কো টর্নিয়েরি বলেন, এই গবেষণা বাংলাদেশের জন্য একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ প্রদান করেছে। এটি এমন একটি মানুষকেন্দ্রিক যতœব্যবস্থা গড়ার ভিত্তি স্থাপন করবে, যেখানে প্রত্যেক প্রবীণ নাগরিক মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারবেন।
আয়াত এডুকেশন ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন তাহসিন আমান বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন কেবল অর্থনীতিতে নয়, সহমর্মিতা ও মানবিক যতেœও প্রতিফলিত হতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি যতেœ বিনিয়োগ শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয়, এটি একটি অর্থনৈতিক সুযোগও।’
গবেষণার মূল ফলাফল ও সুপারিশ উপস্থাপন করেন এডিবি বাংলাদেশ রেসিডেন্ট মিশনের প্রিন্সিপাল সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অফিসার নাশিবা সেলিম, আয়াত এডুকেশন ফাউন্ডেশনের চিফ অপারেটিং অফিসার ইমরান চৌধুরী। তারা জানান, বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সের এবং ২০৫০ সালের মধ্যে এই হার ৩০ শতাংশেরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে যতেœর চাহিদা বহুগুণে বাড়ছে, অথচ যতœ প্রদান এখনো প্রধানত নারীনির্ভর এবং অনানুষ্ঠানিক পারিবারিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করছে। তাই বাংলাদেশের জন্য এখন জরুরি একটি জাতীয় দীর্ঘমেয়াদি যতœনীতি ও কৌশল প্রণয়ন করা, যা বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে সংহত থাকবে। পাশাপাশি, যতœদাতাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, ডিজিটাল স্বাস্থ্য প্রযুক্তি ব্যবহার এবং টেকসই অর্থায়নব্যবস্থার উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন