বুধবার ২০ আগস্ট ছিল, বিশ্ব মশা দিবস ২০২৫। প্রতিবছর দিনটি পালিত হয় চিকিৎসক স্যার রোনাল্ড রসের আবিষ্কারের স্মরণে। ১৮৯৭ সালের এই দিনে তিনি প্রমাণ করেছিলেন, অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়ার প্রধান বাহক। এই আবিষ্কারের ফলে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বিপ্লব আসে এবং মশাবাহিত রোগ-প্রতিরোধে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
মশা পৃথিবীর ইতিহাসে মানুষের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্যঝুঁকির অন্যতম। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফাইলেরিয়া, জিকা ও জাপানিজ এনসেফালাইটিসের মতো রোগ বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে ভোগাচ্ছে। এ রোগগুলো শুধু মানুষের জীবন নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব ফেলে।
মশার ভয়াবহতা: কারণ ও প্রজনন
১. দ্রুত বংশ বিস্তার: এক ফোঁটা পানিতেই শত শত ডিম ফোটে।
২. আবহাওয়া অনুকূল: উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু মশার বৃদ্ধি বাড়িয়ে দেয়।
৩. জলজ পরিবেশে গাফিলতি: প্লাস্টিক বোতল, টায়ার, ড্রেন, ফুলের টব ইত্যাদি জায়গায় পানি জমে মশার আবাস গড়ে।
৪. জলবায়ু পরিবর্তন: বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও বর্ষার পরিবর্তন মশার বিস্তারকে উৎসাহিত করে।
৫. সচেতনতার অভাব: মশারি না ব্যবহার করা, জমে থাকা পানি ফেলে না দেওয়া, দরজা-জানালা খোলা রাখা সবই মশার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশে মশাবাহিত রোগের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ মশাবাহিত রোগের জন্য অত্যন্ত অনুকূল। দেশে ১২৩ প্রজাতির মশা শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ঢাকায় ১৪ প্রজাতি রয়েছে।
*ডেঙ্গু: প্রথম শনাক্ত: ১৯৬৪ সালে (তখন ‘ঢাকা ফিভার’ নামে)।
বাহক: এডিস ইজিপ্টি ও এডিস অ্যালবোপিকটাস। লক্ষণ: জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনের ব্যথা, র্যাশ, জয়েন্ট ব্যথা। জটিলতা: রক্তক্ষরণ, শক, মৃত্যু
*চিকুনগুনিয়া: প্রথম শনাক্ত: ২০০৮।
বাহক: এডিস মশা। লক্ষণ: হঠাৎ জ্বর, তীব্র জয়েন্ট ব্যথা। জটিলতা: দীর্ঘমেয়াদি জয়েন্ট ব্যথা, দুর্বলতা
*ম্যালেরিয়া বাহক: অ্যানোফিলিস মশা।
প্রাদুর্ভাব: পার্বত্য ও সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় বেশি।
লক্ষণ: ওঠানামা করা জ্বর, শীত লাগা, দুর্বলতা।
জটিলতা: অ্যানিমিয়া, কিডনি ও লিভার বিকল, মৃত্যু
*ফাইলেরিয়া (গোদ রোগ)।
বাহক: কিউলেক্স ও ম্যানসোনিয়া।
লক্ষণ: হাত-পা ফুলে যাওয়া।
জটিলতা: আজীবন অক্ষমতা, সামাজিক বৈষম্য
*জাপানিজ এনসেফালাইটিস।
বাহক: কিউলেক্স।
লক্ষণ: জ্বর, মাথাব্যথা, স্নায়বিক সমস্যা, খিঁচুনি। জটিলতা: মস্তিষ্কে প্রদাহ, পক্ষাঘাত, মৃত্যু
সাম্প্রতিক ডেঙ্গু পরিসংখ্যান
২০১৯ আক্রান্ত ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪, মৃত্যু ১৭৯। ২০২১ আক্রান্ত ২৮ হাজার ৪২৯, মৃত্যু ১০৫। ২০২২ আক্রান্ত ৬২ হাজার ৩৮২, মৃত্যু ২৮১। ২০২৩ আক্রান্ত ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯, মৃত্যু ১ হাজার ৭০৫। ২০২৪ আক্রান্ত ১ লাখ ১৯৪, মৃত্যু ৫৬৬। ২০২৫ জানুয়ারি থেকে (আগস্ট) আক্রান্ত ২৪ হাজার ১৮৩, মৃত্যু ১০১। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে
ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য সুপারিশসমূহ
১. পরিবেশ ও আবর্জনা নিয়ন্ত্রণ
ডেঙ্গু ছড়ানোর মূল উৎস হলো মশার লার্ভা। বাড়ির আশপাশে জায়গায় জমে থাকা পানি, যেমন: টিউব, খোলা পাত্র, কুয়ো, ঝুড়ি, পাত্র বা নালি পরিষ্কার রাখতে হবে। আবর্জনা সঠিকভাবে ফেলে দেওয়া, যাতে মশা লার্ভা জন্মানোর স্থান না পায়।
২. পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ রাখার পদ্ধতি
পানি সংরক্ষণের পাত্র ঢেকে রাখা বা ঢাকনা দিয়ে বন্ধ রাখা। ব্যবহার না হওয়া পানি খালি করা বা নিয়মিত পরিবর্তন করা। বৃষ্টির পানি জমে থাকা স্থান দ্রুত শুকিয়ে ফেলা।
৩. মশা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ
ঘরের ভেতরে মশারি ব্যবহার করা। মশার কিডি বা স্প্রে প্রয়োগ করা। রাতে ঘুমানোর সময় দীর্ঘ বাহু ও পায়ের কাপড় পরা। মশার জন্মনিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত স্প্রে দ্বারা মশা কমানো।
৪. ডেঙ্গুর লক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা
হঠাৎ জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনের ব্যথা, মাংসপেশি বা জয়েন্টে ব্যথা, বমি বা গা ব্যথার মতো লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা। ডেঙ্গুর ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
৫. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করা। শরীর সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করা। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য ভিটামিন ও সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা।
মশাবাহিত রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
ব্যক্তিগত সতর্কতা
- ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার।
- সকাল ও সন্ধ্যা দরজা-জানালা বন্ধ রাখা।
- মশা প্রতিরোধী লোশন বা স্প্রে ব্যবহার।
- লম্বা হাতা জামা পরিধান।
সামাজিক ও ঘরোয়া পদ্ধতি
প্রতি সপ্তাহে বাসার চারপাশে পানি জমা আছে কি না, পরীক্ষা করা। ফুলের টব, টায়ার, ড্রেন, বোতল বা নির্মাণাধীন জায়গা পরিষ্কার রাখা। নিম তেল, কর্পূর, লেবু-লবঙ্গ, শুকনো চা পাতা ধোঁয়া প্রয়োগ করে প্রাকৃতিকভাবে মশা তাড়া করা।
সরকারি উদ্যোগ
মশাবাহিত রোগ-প্রতিরোধে সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত ও সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি কার্যকর সরকারি পদক্ষেপ ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
প্রথমত, ফগিং ও লার্ভিসাইড প্রয়োগ নিয়মিতভাবে চালাতে হবে। বিশেষ করে ড্রেন, নর্দমা, খাল-বিল, নির্মাণাধীন ভবন ও জমে থাকা পানিতে লার্ভিসাইড ব্যবহার করলে মশার প্রজনন অনেকাংশে কমানো যায়। শহরের প্রতিটি এলাকায় নির্দিষ্ট সময় পরপর ফগিং কার্যক্রম পরিচালনা করলে পূর্ণবয়স্ক মশার বিস্তার রোধ করা সম্ভব।
দ্বিতীয়ত, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যাপ্ত শয্যা এবং চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি। ডেঙ্গু বা অন্যান্য মশাবাহিত রোগের মৌসুমে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যায়। তাই আগে থেকেই প্রয়োজনীয় ওষুধ, স্যালাইন, রক্ত পরীক্ষা এবং আইসিইউ সুবিধা প্রস্তুত রাখা দরকার।
তৃতীয়ত, গণসচেতনতা প্রচারণা ও স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ। টিভি, রেডিও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্থানীয় প্রচার মাধ্যমে মানুষকে নিয়মিত সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দিলে তারা ঘরে ঘরে গিয়ে জনগণকে মশা প্রতিরোধে উদ্বুদ্ধ করতে পারবেন।
সুতরাং বলা যায়, সরকার যদি সমন্বিতভাবে ফগিং ও লার্ভিসাইড কার্যক্রম, পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা এবং গণসচেতনতা জোরদার করে, তবে মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ অনেক সহজ হবে।
জটিলতা ও সতর্কবার্তা
মশাবাহিত রোগগুলো সাধারণ মনে হলেও তাদের জটিলতা ভয়াবহ হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না হলে জীবনহানির ঝুঁকি তৈরি হয়।
ডেঙ্গু রোগে জ্বরের পাশাপাশি রক্তক্ষরণ, শক এবং মারাত্মক অবস্থায় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। চিকুনগুনিয়া রোগে তীব্র জ্বর সেরে গেলেও দীর্ঘদিন জয়েন্ট ব্যথা থেকে যায়, যা রোগীর স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করে। ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন কিডনি বা লিভার বিকল হয়ে যেতে পারে এবং চিকিৎসা না পেলে মৃত্যু ঘটতে পারে। ফাইলেরিয়া রোগে হাত-পা অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায়, ফলে আজীবন অক্ষমতা ভোগ করতে হয়। অন্যদিকে, জাপানিজ এনসেফালাইটিস মস্তিষ্কে সংক্রমণ ঘটিয়ে পক্ষাঘাত বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
এ কারণে সতর্কতা অবলম্বন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। পরিবার পর্যায়ে বাড়ি ও আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখা, জমে থাকা পানি অপসারণ করা এবং মশারি ব্যবহার করা উচিত। সমাজের সবাই মিলে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালাতে হবে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত অসচেতনতা পুরো পরিবার ও সমাজকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে।
সুতরাং, মশাবাহিত রোগ-প্রতিরোধে সতর্কতা হলো সর্বোত্তম প্রতিকার। সময়মতো পদক্ষেপ নিলে ভয়াবহ জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে ভবিষ্যতে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। শহরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশার প্রজনন আরও বেড়ে যেতে পারে। এ জন্য কার্যকর করণীয় নির্ধারণ জরুরি।
১. প্রতিদিন ঘর ও আশপাশের ছোট ছোট পানি জমার স্থান ধ্বংস করা।
২. কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সম্মিলিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো।
৩. প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোয় জরুরি চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নিশ্চিত করা।
৪. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী ভেক্টর কন্ট্রোল কার্যক্রম জোরদার করা।
৫. স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের সচেতনতামূলক শিক্ষা দেওয়া।
৬. গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত প্রচারণা চালানো।
৭. গবেষণা ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহার করে মশা নিয়ন্ত্রণের নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন।
৮. স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করা।
এসব পদক্ষেপ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সহজ হবে এবং মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আসবে।
হোমিও সমাধান:
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে মশাবাহিত রোগ-প্রতিরোধ ও উপশমের জন্য বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করা হয়। যদিও এটি কোনোভাবেই মশা ধ্বংস করতে পারে না, তবে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে রোগের জটিলতা কমাতে সাহায্য করে। যেই সব ওষুধ লক্ষণের ওপর প্রাথমিকভাবে আসতে পারে, ইউপাটোরিয়াম পারফোলিয়াটাম, ক্রোটালাস হররিডাস, ফসফরাস, রাসটক্স, ব্রায়োনিয়া, চায়না অফিসিনালিস, আর্সেনিকাম অ্যালবাম, ক্যালকেরিয়া কার্ব, সালিসিয়া, বেলাডোনা, হেলেবোরাসসহ আরও অনেক ওষুধ লক্ষণের ওপর আসতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করা উচিত নয়।
কারণ রোগের লক্ষণ, তীব্রতা ও রোগীর শারীরিক গঠন অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন করতে হয়। এ ছাড়া হোমিও চিকিৎসার পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, মশারি ব্যবহার করা এবং জমে থাকা পানি অপসারণ করা জরুরি। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ছাড়া শুধু হোমিওপ্যাথি নির্ভর করলে ঝুঁকি বাড়তে পারে।
সুতরাং, হোমিওপ্যাথি হতে পারে একটি বিকল্প সমাধান, তবে সচেতনতা ও প্রতিরোধই সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার।
পরিশেষে বলতে চাই, মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া শুধু চিকিৎসার ওপর নির্ভর করে সম্ভব নয়, বরং এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া প্রভৃতি রোগের চিকিৎসা থাকলেও আক্রান্ত হওয়ার পর রোগ-প্রতিরোধের তুলনায় ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই প্রতিকার নয়, প্রতিরোধই হওয়া উচিত প্রধান অঙ্গীকার।
প্রথমত, পরিবার থেকে শুরু করতে হবে সচেতনতা। বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানি, ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, ড্রেন বা ক্যানেল মশার প্রজননের প্রধান স্থান। নিয়মিত এগুলো পরিষ্কার করলে মশার বিস্তার রোধ করা যায়। দ্বিতীয়ত, সমাজের সম্মিলিত উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। স্থানীয়ভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো, মানুষকে সচেতন করা এবং যেখানে প্রয়োজন সেখানে কীটনাশক ছিটানো হলে এর প্রভাব বহুগুণ বেড়ে যায়।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন। নগর পরিকল্পনায় ড্রেনেজব্যবস্থা উন্নত করা, মশা দমন কার্যক্রম নিয়মিত করা এবং জনসচেতনতামূলক প্রচার বাড়ানো হলে মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ অনেক সহজ হবে। একই সঙ্গে গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
সবশেষে বলা যায়, মশাবাহিত রোগ-প্রতিরোধে চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ অনেক বেশি কার্যকর। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র একযোগে এগিয়ে এলে এ বিপদ থেকে মুক্তি সম্ভব। তাই আমাদের সবার প্রতিজ্ঞা হোক, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, সচেতন থাকা এবং অন্যকেও সচেতন করা। তাহলেই আমরা একসঙ্গে গড়ে তুলতে পারব মশামুক্ত সুস্থ জীবন।
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
কলাম লেখক ও গবেষক
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন