শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ফাহিম হাসনাত

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫, ০৭:৫৬ এএম

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি: কল্পনার জগত থেকে বাস্তবের পথে

ফাহিম হাসনাত

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫, ০৭:৫৬ এএম

ফাহিম হাসনাত

ফাহিম হাসনাত

বর্তমান যুগে আমাদের জীবন প্রযুক্তির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। প্রতিনিয়ত আমরা নতুন নতুন প্রযুক্তি শিখছি, দেখছি আর ব্যবহার করছি, যা আমাদের নিয়ে যাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (অও)-এর এক নতুন জগতে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো উন্নত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ওঈঞ) বা কম্পিউটার সিস্টেম যা মানুষের বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করতে পারে। আর এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তারই একটি অসাধারণ প্রযুক্তি হলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (ঠজ)। এটি এমন একটি প্রযুক্তি যা আমাদের বাস্তব পৃথিবী থেকে অবাস্তব বা ভার্চুয়াল জগতে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে একেবারে কল্পনার জগতের শেষ প্রান্তে পৌঁছে দিতে পারে।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কী এবং কীভাবে এটি কাজ করে:

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এমন একটি প্রযুক্তি যা বাস্তবতাকে ছাপিয়ে আমাদের একটি কৃত্রিম বা ভার্চুয়াল পরিবেশে নিয়ে যায়। এটি ব্যবহারকারীকে এমন একটি জগতে প্রবেশ করায় যেখানে সবকিছুই বাস্তব বলে মনে হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মূল ভিত্তি হলো ইমারসিভনেস (রসসবৎংরাবহবংং) বা নিমগ্নতা, যা ব্যবহারকারীকে কোনো কার্যকলাপ বা পরিবেশে গভীরভাবে নিমজ্জিত করে। এটি শুধু আমাদের দৃষ্টিকে নয়, অনুভূতিকেও প্রভাবিত করে এবং মস্তিষ্কে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করতে পারে।

এই প্রযুক্তির প্রধান উপকরণ হলো হেডসেট, যা অনেকটা ডাইভিং মাস্কের মতো দেখতে এবং এতে দুটি ছোট স্ক্রিন থাকে। এই স্ক্রিনগুলোই ভার্চুয়াল রিয়েলিটির শক্তিশালী অস্ত্র, যা মানুষকে বিমোহিত করে তোলে। ব্যবহারকারীর চারপাশের সবকিছুকে ভুলিয়ে দিয়ে তাকে অন্য কোনো অনুভূতির জগতে নিয়ে যায়। হেডসেটের ভেতরে থাকা সেন্সরগুলো ব্যবহারকারীর বর্তমান অবস্থান যাচাই করে তাকে ভার্চুয়াল জগতের নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যেতে পারে। এই সেন্সরগুলো মানুষের কানের ভেতরের সেন্সরের মতোই কাজ করে, যা আমাদের মস্তিষ্ককে বুঝতে সাহায্য করে আমরা বসে আছি নাকি দাঁড়িয়ে আছি। বিজ্ঞানীরা এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেটের সেন্সর তৈরি করেছেন।

বিভিন্ন ধরনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট:

সব ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট একরকম হয় না। এদের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো কিছু হেডসেটে নিজস্ব স্ক্রিন ও সাউন্ড সিস্টেম থাকে, যা সাধারণত একটি কম্পিউটার বা গেমিং কনসোলের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এগুলোকে বলা হয় ‘রেডিমেড’ ভার্সন। এই হেডসেটগুলো থেকে স্ক্রিন বের করা যায় না এবং এদের সেন্সরগুলো ফিক্সড থাকে।

অন্যদিকে, ‘ডু-ইট-ইয়োরসেল্ফ’ (উড়-রঃ-ুড়ঁৎংবষভ) ভার্সনগুলোতে স্মার্টফোন ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের হেডসেটগুলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অভিজ্ঞতা লাভের একটি কম খরচের উপায়। এতে সাধারণত কোনো কন্ট্রোলার থাকে না, তাই ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার করতে হয়।

শিক্ষাক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োগ:

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা কেবল বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এটিকে আরও প্রাণবন্ত ও কার্যকরী করে তুলেছে। বিজ্ঞান শিক্ষা: শিক্ষার্থীরা এখন ভার্চুয়াল ল্যাবে রাসায়নিক বিক্রিয়া বা মানবদেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রতঙ্গের ত্রিমাত্রিক (৩উ) মডেল দেখতে পারে। এর ফলে জটিল বিষয়গুলো হাতে-কলমে বোঝার অভিজ্ঞতা তৈরি হয়।

ঐতিহাসিক ভ্রমণ:

শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে বসেই প্রাচীন মিসরের পিরামিড বা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতি অনুভব করতে পারে, যা ইতিহাসের পাঠকে জীবন্ত করে তোলে।

ভাষা শিক্ষা:

নতুন ভাষা শেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে সেই ভাষাভাষী অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা বলে বাস্তব পরিস্থিতিতে ভাষা চর্চা করতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্য ও গেমিংয়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি:

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও দারুণ কার্যকর। মেডিটেশন বা রিলাক্সেশন অ্যাপের মাধ্যমে এটি মানুষকে ভার্চুয়াল প্রকৃতির মাঝে নিয়ে যেতে পারে, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া, এটি বিভিন্ন ধরনের অ্যাংজাইটি বা ফোবিয়া থেরাপির কার্যকর চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবেও দেখা হয়।

ভিডিও গেমের ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার ব্যাপক। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন গেম খেলা যায় যেখানে একজন খেলোয়াড় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত চরিত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখানে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় হিসেবে কাজ করে, যা গেমের অভিজ্ঞতাকে আরও চ্যালেঞ্জিং ও বাস্তবসম্মত করে তোলে। ভিডিও গেম শিল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পথ সন্ধান, ডেটা মাইনিং এবং খেলোয়াড়ের অভিজ্ঞতা মডেলিংয়ের মতো বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সম্পর্ক:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ছাড়া ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অভিজ্ঞতা অসম্পূর্ণ। কম্পিউটার ভিশন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যামেরা থেকে মোশন ট্র্যাকিং ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করা হয়, যা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা অগমেন্টেড রিয়েলিটি (অজ)-কে ব্যবহারকারীর বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে নির্বিঘেœ মিশে যেতে সাহায্য করে।

ভয়েস রিকগনিশন: ভার্চুয়াল শপিং থেকে শুরু করে অন্য শিল্পে ভয়েস রিকগনিশনের মাধ্যমে মানুষের যোগাযোগ আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের ওপর ভিত্তি করে গঠিত।

অবতার (আধঃধৎ) তৈরি: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে অবতার তৈরি করা হয়, যারা ভার্চুয়াল সহকারী হিসেবে কাজ করে এবং প্রাকৃতিক কথোপকথন বুঝতে ও বিস্তারিত সহায়তা প্রদান করতে পারে।

অগমেন্টেড রিয়েলিটি (অজ)-ও একটি দ্রুত বিকাশমান প্রযুক্তি, যা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সঙ্গে মিলিত হয়ে আরও উন্নত অভিজ্ঞতা তৈরি করে। অগমেন্টেড রিয়েলিটি মানুষের বাস্তব জগতের ওপর ডিজিটাল তথ্য যুক্ত করে, যেমন মোবাইলে পোকেমন গো খেলার সময়। একটি ভালো মানের ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অভিজ্ঞতা নির্ভর করে অগমেন্টেড রিয়েলিটির যথাযথ প্রয়োগের উপর।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা: মেটাভার্স:

সম্প্রতি, মেটাভার্স শব্দটি ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকের কাছে এটি ‘রেডি, প্লেয়ার ওয়ান’-এর মতো সায়েন্স-ফিকশন সিনেমার মতো মনে হলেও, মেটাভার্সকে বাস্তবে পরিণত করার জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, অগমেন্টেড রিয়েলিটি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে ৫এ যোগাযোগ প্রযুক্তি, এজ (ঊফমব-পড়সঢ়ঁঃরহম) এবং ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের উন্নয়নের ফলে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট আরও হালকা, শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারিযুক্ত হবে। যখন ওড়ঞ (ওহঃবৎহবঃ ড়ভ ঞযরহমং) সেন্সরের সঙ্গে এই ধরনের সম্পদ সংযুক্ত হবে, তখন একটি নিমজ্জিত, বুদ্ধিমান বাস্তবতার সম্ভাবনা প্রায় সীমাহীন হয়ে উঠবে।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এখন আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন নয়, এটি বর্তমানের বাস্তবতা। এটি শুধু একটি বিনোদনের মাধ্যম নয় বরং শেখা, ভাবা, আবিষ্কার করা এবং নিজের ভবিষ্যৎ তৈরি করার অসাধারণ একটি হাতিয়ার। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যদি এখনই এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শেখে এবং অনুশীলন শুরু করে, তাহলে তারা সেই প্রজন্ম হবে যারা প্রযুক্তিনির্ভর সুন্দর, তাহলে তারা হবে সেই প্রজন্ম যারা প্রযুক্তিনির্ভর সুন্দর, নিরাপদ এবং দীর্ঘমেয়াদি সুবিধাযুক্ত বুদ্ধিদীপ্ত সমাজব্যবস্থা তৈরি করবে।

ফাহিম হাসনাত
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!