বাংলাদেশে শীতকাল মানেই বিয়ের মৌসুম। প্রখর রোদ বা অসহনীয় গরমের ঝামেলা না থাকায় এই সময়টিতে বিয়ের আয়োজন যেন আরও আনন্দময় হয়ে ওঠে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়টাকে বলা হয় বিয়ের মৌসুম—এই সময়েই সারা দেশে শুরু হয় বিয়ের ধুম। আবহাওয়ার আরামদায়ক পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত হয় পারিবারিক আনন্দ, উৎসব আর পরিপূর্ণ প্রস্তুতির সুযোগ।
শীতের আমেজ পড়তেই শুরু হয় একের পর এক বিয়ের অনুষ্ঠান। অনেকেই নতুন জীবনের সূচনার জন্য বেছে নেন এই সময়টাকেই। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন কি, শীতকালে বিয়ে করার এত জনপ্রিয়তার পেছনের কারণগুলো কী?
আসুন, দেখে নেওয়া যাক শীতকালে বিয়ে করার কিছু বিশেষ সুবিধা:
দীর্ঘ ছুটির সুবিধা
বিয়ের আয়োজন মানেই সময় ও প্রস্তুতি দরকার। আর বছরের শেষ দিকেই মিলে টানা ছুটির সুযোগ। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত এমনকি সরকারি দপ্তরেও ছুটি থাকে। তাই এ সময়টাতেই সবাই সুবিধামতো পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করতে পারেন। দূরে থাকা আত্মীয়রাও ছুটির সুবাদে যোগ দিতে পারেন আনন্দে।
কম পরিশ্রম, কম ভোগান্তি
বিয়ের প্রস্তুতিতে পরিশ্রম থাকবেই তবে গরমকালের মতো ক্লান্তি বা হাপিয়ে ওঠার ঝামেলা থাকে না শীতে। সাজসজ্জা, প্যান্ডেল, খাওয়াদাওয়া, বরযাত্রা বা কনেযাত্রা—সবকিছুই হয় অনেক আরামদায়কভাবে। অতিথিদের ঘেমে যাওয়া বা গরমে হাঁপিয়ে ওঠার ভয় থাকে না। সবাই স্বস্তিতে উপভোগ করতে পারেন অনুষ্ঠানটি।

সাজ-সজ্জায় বাড়তি স্বস্তি
গরম মানেই ঘাম আর অস্বস্তি, যা সাজ নষ্ট করে দেয় মুহূর্তেই। কিন্তু শীতে থাকে না এমন কোনো ভয়! বিয়ের সাজ যতই ভারী হোক না কেন, মেকআপ গলে যায় না, চুলের স্টাইল ঠিক থাকে, আর মুখেও থাকে একদম ফ্রেশ লুক। তাই কনে থেকে অতিথি- সবার সাজ থাকে নিখুঁত। তাছাড়া শীতের ঠান্ডা আবহাওয়ায় একসঙ্গে অনেক মানুষ জড়ো হলেও অস্বস্তি হয় না, বরং উৎসবের আবহ আরো জমে ওঠে।
ফুলে ফুলে সাজানো প্রকৃতি
শীতকাল মানেই ফুলের রাজত্ব! ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধা, অর্কিড, গাঁদা, গোলাপ, জুঁই-শীতের মৌসুমে পাওয়া যায় নানা রঙের টাটকা ফুল। বিয়ের সাজসজ্জায় এই ফুলগুলো এনে দেয় এক আলাদা জৌলুস ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। কৃত্রিম ফুলের প্রয়োজনই পড়ে না। শীতের ফুল দিয়ে সাজানো বিয়ের মঞ্চ, টেবিল বা প্রবেশদ্বার—সবই হয়ে ওঠে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

পারফেক্ট ডেকোরেশন
বিয়ের সাজসজ্জায় ফুল ছাড়া কিছুই সম্পূর্ণ নয়। শীতে ফুল সহজলভ্য হওয়ায় আয়োজন হয় আরও রঙিন ও বাজেটবান্ধব। ডেকোরেশনে ব্যবহার করা যায় নানা রঙের ফুল, যা গরমকালে অনেক সময় পাওয়া যায় না বা দামী হয়। ফুলের সুবাসে ভরে ওঠে পরিবেশ, আর বিয়ের উৎসব পায় রাজকীয় ছোঁয়া।
তুলনামূলকভাবে খরচ কম
শীতের বিয়েতে খরচ কিছুটা কম হয় এটাই বড় সুবিধা। গরমকালের মতো ফ্যান, এসি বা ঠান্ডা পানীয়ের বাড়তি খরচ থাকে না। ফলমূলের চাহিদা ও দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকায় বিয়ের বাজেটও নিয়ন্ত্রণে থাকে। দিনের দৈর্ঘ্য কম হওয়ায় বিকেলের মধ্যে অধিকাংশ আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা যায়। ফলে সময়, শ্রম ও অর্থ সবই বাঁচে।

ভরপুর খাওয়া-দাওয়া
বিয়ের খাবার মানেই পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, রেজালা, কাবাব আর মিষ্টান্ন। কিন্তু গরমকালে এমন খাবার খেতে গিয়ে অনেকেই কষ্ট পান। শীতে কিন্তু উল্টো যত খুশি খাওয়া যায়, ক্লান্তি বা অস্বস্তি ছাড়াই। এই সময় খাবারও নষ্ট হয় না সহজে, ফলে বিয়ের আয়োজকরা থাকেন নিশ্চিন্ত।
হানিমুন
নতুন জীবনের সূচনা মানেই দুজনার একান্ত সময় কাটানো। অর্থাৎ হানিমুনে যাওয়া। আর শীতকাল সেই সময়ের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। দেশের ভেতর বা বাইরে ঘোরাঘুরির জন্য শীতের আবহাওয়া একদম পারফেক্ট। পাহাড়, সমুদ্র, বন যেখানেই যাওয়া হোক না কেন, ভ্রমণের আনন্দ থাকে দ্বিগুণ। পাশাপাশি হোটেল ও রিসোর্টগুলোতেও এ সময় থাকে বিশেষ কাপল অফার, যা নবদম্পতিদের জন্য বাড়তি সুবিধা।

সব মিলিয়ে দেখা যায়, শীতকাল শুধু বিয়ের জন্য নয়, পুরো আয়োজনটাকেই করে তোলে আরও আনন্দদায়ক, আরামদায়ক ও স্মরণীয়। আবহাওয়া, ছুটি, সাজসজ্জা, খাওয়া-দাওয়া—সবকিছুই থাকে বিয়ের পক্ষে অনুকূল। তাই তো বছরের এই সময়টাই থেকে যায় নবদম্পতির জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতিগুলোর একটি হিসেবে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন