শনিবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৫, ০৯:৪৮ পিএম

ব্রেকআপের পর জেন-জিদের মধ্যে বাড়ছে ছুটি চাওয়ার প্রবণতা

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৫, ০৯:৪৮ পিএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সম্প্রতি একটি ছোট ই-মেইল ভারতের করপোরেট জগতে ভাইরাল হয়েছে। গুরগাঁওভিত্তিক জীবনসঙ্গী খোঁজার অ্যাপ ‘নট ডেটিং’-এর এক কর্মী লিখেছেন, ‘সম্প্রতি আমার ব্রেকআপ হয়েছে। কাজের প্রতি মনোযোগ দিতে পারছি না। সামান্য বিরতি দরকার। আজ বাসা থেকে কাজ করব।’

ই-মেইলটি খুব সরল ও অকপট হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও তা সঙ্গে সঙ্গে মঞ্জুর করেন। তিনি নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে লিখেছেন, ‘এটাই আমার দেখা সবচেয়ে সৎ ছুটির আবেদন।’

এই ঘটনা লিংকডইন, এক্স ও ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হয়ে যায়। একদিকে সিইওর দ্রুত সিদ্ধান্তকে মানুষ সহানুভূতিশীল নেতৃত্বের উদাহরণ হিসেবে দেখছে, অন্যদিকে অনেকে এটিকে পেশাগত সীমারেখা ভাঙা হিসেবে সমালোচনা করেছেন।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই ঘটনা গভীর একটি পরিবর্তনের প্রতিফলন—জেনারেশন জেড বা জেন-জিদের (১৯৯৭-২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া) মানসিকতা ও পেশাগত দৃষ্টিভঙ্গি।

জেন-জি প্রজন্মের কর্মীরা মনে করেন, কর্মক্ষেত্রে মানবিক মনোভাব দেখানো দুর্বলতা নয়, বরং অপরিহার্য। কাজের দক্ষতার পাশাপাশি মানসিক স্থিতি ও আত্মিক স্বচ্ছতা তাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাজ্যের লিগ্যাল অ্যান্ড জেনারেল গ্রুপ প্রোটেকশনের এক জরিপে দেখা গেছে, গত এক বছরে প্রতি তিনজন জেন-জি কর্মীর মধ্যে একজন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগেছেন। এটি অন্য প্রজন্মের তুলনায় বেশি। পাশাপাশি, জেন-জি কর্মীরা মানসিক সহায়তা চাওয়াতেও বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

অফিসে আবেগের জায়গা: পরিবর্তিত বাস্তবতা

দীর্ঘদিন ধরে পেশাদারিত্ব মানে ছিল ব্যক্তিগত অনুভূতিকে আড়াল করা। তবে কোভিড মহামারির পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। হাইব্রিড ওয়ার্ক, অনলাইন সংযোগ এবং ক্রমবর্ধমান বার্নআউটের কারণে কাজ ও ব্যক্তিজীবনের সীমারেখা এখন অনেকটাই মিশে গেছে।

২০২৪ সালে ফিউচার ফোরামের এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪২ শতাংশ কর্মী বার্নআউটে ভুগছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ‘পেশাগত মানসিক অবস্থা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বার্নআউটের মধ্যে রয়েছে চরম ক্লান্তি, কাজ থেকে মানসিক দূরত্ব, উৎপাদনশীলতা হ্রাস, হতাশা ও উদ্বেগ।

ব্রেকআপের প্রভাব কর্মক্ষমতায়

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্পর্ক ভাঙার পর শারীরিক ও মানসিক প্রভাব অনেকটা শোকের মতো। ঘুমের ব্যাঘাত, মনোযোগ হারানো এবং উদ্যম কমে যাওয়া কর্মক্ষমতায় সরাসরি প্রভাব ফেলে। যারা আগেই মানসিক চাপ ও কাজের চাপ অনুভব করছেন, তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।

অল্প কয়েকদিনের বিরতি কোনো বিলাসিতা নয়, বরং আত্মনিয়ন্ত্রণ ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার অংশ। তাই, ব্রেকআপের পর ছুটি চাওয়া জেন-জি প্রজন্মের জন্য একটি প্রাকৃতিক ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

কর্মক্ষেত্রে সমাধান ও সুপারিশ

সব প্রতিষ্ঠান এই ধরনের ছুটি মঞ্জুর করতে আগ্রহী নয়। অনেক এইচআর বিশেষজ্ঞ সতর্ক করছেন, বিরতি স্বীকৃতি দিলে নীতিগত জটিলতা বা অপব্যবহার হতে পারে। তবে আধুনিক কর্মসংস্কৃতির সমর্থকরা বলছেন, সহানুভূতি ও পেশাদারিত্ব পরস্পরের বিপরীত নয়। বরং এটি পেশাদারিত্বের নতুন রূপ।

মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কিছু সুপারিশ

  • ব্যক্তিগত আবেগকে স্বীকৃতি দিন এবং তা লোকানোর চেষ্টা করবেন না।
  • কাজ ও জীবনের সীমা ঠিক করুন, প্রয়োজন হলে ফ্লেক্সিবল বা বাসা থেকে কাজ করুন।
  • বিশ্বাসযোগ্য সহকর্মী, বন্ধু বা কাউন্সেলরের সঙ্গে কথা বলুন।
  • ঘুম, ব্যায়াম ও সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।
  • সৃজনশীলভাবে আবেগ প্রকাশ করুন-লেখা, শিল্পচর্চা বা থেরাপি।
  • অফিসে পারফরম্যান্সে সাময়িক প্রভাব থাকলে খোলামেলা জানিয়ে দিন।

মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, জেন-জি প্রজন্মের কাছে কর্মক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা মানে আবেগ লুকানো নয়, বরং আবেগের মধ্যেই শক্তিশালী হওয়া এবং ব্যক্তিগত কষ্টকে পেশাদার জীবনের উন্নতির শক্তি হিসেবে ব্যবহার করা।

ব্রেকআপের পর ছুটি চাওয়া জেন-জিদের জন্য লজ্জার বিষয় নয়। এটি তাদের স্বচ্ছতা, সততা এবং মানসিক স্থিতির প্রকাশ যা আধুনিক কর্মক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Link copied!