প্রচারণা শেষ হয়েছে এক দিন আগেই। নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচন আজ মঙ্গলবার। নিউ ইয়র্ককে বলা হয় ‘বিশ্বের রাজধানী’। এই শহরে প্রথমবার এমন একজন মেয়র পদে নির্বাচিত হতে পারেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির চলতি ধারার একেবারে বিপরীতমুখী। তিনি রক্ষণশীল নন। তিনি খোলামেলাভাবে একজন প্রগতিশীল। যিনি নিজেকে সমাজতন্ত্রী বলতেও দ্বিধা করেন না। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার রিপাবলিকান পার্টি এক ‘শ্বেতকায় আমেরিকার’ কথা বলছেন। জোহরান মামদানি শ্বেতকায় নন। বাদামি রঙের দক্ষিণ এশীয়।
আজ মঙ্গলবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তার আগে সর্বশেষ পাওয়া নতুন কয়েকটি জরিপে দেখা যায়, ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জোহরান মামদানি বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন। তবে অন্তত একটি জরিপ বলছে, প্রধান তিন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জোহরান ও কুমোর মধ্য যে কারো জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। এই জরিপ দেখলে মনে হয়, বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের উত্তরসূরি কে হবেনÑ সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশ জমে উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এমারসন কলেজ/পিআইএক্স ১১/দ্য হিলের জরিপে দেখা গেছে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রায় ২৫ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন। এই জরিপে জোহরানের প্রতি ৫০ শতাংশ এবং কুমোর প্রতি ২৫ শতাংশ ভোটার সমর্থন জানিয়েছেন। রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া কুমোর থেকে চার পয়েন্ট পিছিয়ে আছেন। স্লিওয়ার প্রতি সমর্থন রয়েছে ২১ শতাংশ ভোটারের এবং ৪ শতাংশ ভোটার কাকে ভোট দেবেন, এখনো সেই সিদ্ধান্ত নেননি। অর্থাৎ কুমোর খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছেন স্লিওয়া। জোহরানের সমর্থন গত মাসের তুলনায় ৭ শতাংশ বেড়েছে, কুমোর জনসমর্থন ৩ শতাংশ কমেছে, আর স্লিওয়ার সমর্থন বেড়েছে ১১ শতাংশ। এই জরিপ গত ২৫ থেকে ২৭ অক্টোবরের মধ্যে পরিচালিত হয়েছে। এতে সম্ভাব্য ভোটার ও যারা ইতিমধ্যে ভোট দিয়েছেন, তারা অংশ নিয়েছেন। এতে এরর অব মার্জিন বা ভুলের পরিমাণ ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এমারসন কলেজ পোলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক স্পেনসার কিমবলের ভাষায়, জোহরান বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি জোট গড়ে তুলেছেন। কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে তার সমর্থন গত মাসে ৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭১ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে কুমোর সমর্থন ১০ পয়েন্ট কমেছে।
জোহরান তরুণ ভোটারদের মধ্যেও শক্ত অবস্থানে আছেন। ৫০ বছরের নিচের ৬৯ শতাংশ ভোটার তাকে সমর্থন করছেন। আর ৫০ বছরের বেশি বয়সি ভোটারদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ জোহরানকে, ৩১ শতাংশ কুমোকে এবং ২৮ শতাংশ স্লিওয়ার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত মারিস্ট নিউ ইয়র্ক সিটি জরিপে দেখা গেছে, সম্ভাব্য ভোটারদের মধ্যে জোহরান স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমোর চেয়ে ১৬ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন। রিপাবলিকান প্রার্থী স্লিওয়ার তুলনায় জোহরান মামদানি প্রায় ৩২ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। জরিপে দেখা যায়, কাকে ভোট দেবেন, সে ব্যাপারে যারা এখনো পুরোপুরি সিদ্ধান্ত নেননি, তবে এক প্রার্থীর দিকে ঝুঁকে আছেন, তাদের মধ্যে জোহরানের প্রতি সমর্থন রয়েছে ৪৮ শতাংশ ভোটারের। আর কুমোর প্রতি ৩২ শতাংশ ও স্লিওয়ার প্রতি ১৬ শতাংশ ভোটারের সমর্থন। এই জরিপ ২৪ থেকে ২৮ অক্টোবরের মধ্যে পরিচালিত হয়েছে। এতে ত্রুটির সীমা হতে পারে ৪ দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্ট। এই ফল সেপ্টেম্বরের মারিস্ট জরিপের সঙ্গে প্রায় মিলে গেছে। তখনো বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। ওই সময় জোহরানকে ৪৬ শতাংশ, কুমোকে ৩০ শতাংশ ও স্লিওয়াকে ১৮ শতাংশ ভোটার সমর্থন জানিয়েছিলেন।
সর্বশেষ মারিস্টের জরিপে দেখা গেছে, স্লিওয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ালে জোহরানের প্রতি সমর্থন বেড়ে দাঁড়াবে ৫১ শতাংশ। অন্যদিকে কুমো সমর্থন পাবেন ৪৪ শতাংশ ভোটারের। যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে কুমো ২০২১ সালে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের গত বুধবার প্রকাশিত জরিপে দেখা যায়, জোহরান ৪৩ শতাংশ সম্ভাব্য ভোটারের সমর্থন পাচ্ছেন। অন্যদিকে কুমোর প্রতি ৩৩ শতাংশ ও স্লিওয়ার প্রতি মাত্র ১৪ শতাংশ ভোটারের সমর্থন রয়েছে। কুইনিপিয়াকের সহকারী পরিচালক মেরি স্নো বলেন, ‘প্রার্থীরা তাদের বক্তব্য পেশ করেছেন, আগাম ভোট শুরু হয়েছে, কুমোর চেয়ে জোহরান ১০ পয়েন্ট এগিয়ে, স্লিওয়া অনেক পিছিয়ে। তবে এখনো একটি ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ আছেÑ সেটি হচ্ছে সিদ্ধান্তহীন ভোটারের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে, যা শেষ পর্যায়ে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
জোহরান মামদানি তার নির্বাচনি প্রচারণার অংশ হিসেবে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। মূলত মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা অভিবাসী নাগরিকদের দৃষ্টি আকর্ষণে এই ভিডিওতে তিনি আরবিতে কথা বলেছেন। ভিডিওতে তাকে ভোট দেওয়ার আবেদন জানান মামদানি। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর লোকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। এ সময় তিনি কসমোপলিটন শহরটির নাগরিকদের জীবনযাত্রা সহজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
মামদানির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি ওবামার
জনমত জরিপে এগিয়ে থাকা প্রার্থী জোহরান মামদানি বিশেষ একটি ফোনকল পান। তাকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি মামদানির প্রচারাভিযানের প্রশংসা করেন এবং প্রস্তাব দেন, যদি মামদানি জয়ী হন, তবে তিনি ‘পরামর্শদাতা’ বা ‘সাউন্ডিং বোর্ড’ হিসেবে পাশে থাকবেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
শেষ সময়েও ইহুদিদের মন জয়ের চেষ্টায় মামদানি
নিউ ইয়র্কে মেয়র নির্বাচনের ঠিক আগে ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী একটি অংশের সমর্থন পেয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি। তবে এই সমর্থনকে কেন্দ্র করে সম্প্রদায়টির নেতাদের মধ্যে বিভক্তিও প্রকাশ্যে এসেছে। ওই গোষ্ঠীর শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুয়োমাকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। ইসরায়েলের প্রভাবশালী দৈনিক হারেৎজ এই ঘটনাকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে। সোমবার পত্রিকাটি জানিয়েছে, নিউইয়র্কে বসবাসকারী ইহুদিদের মধ্যে হাসিদি সম্প্রদায়ের আহরোনিম গোষ্ঠীর এই বিভক্তি নিউ ইয়র্কের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। গাজায় ইসরায়েলি অভিযান নিয়ে সমালোচনামুখর হওয়ায় জোহরান মামদানির ওপর অনেক ইহুদি ভোটার নাখোশ। এমন পরিস্থিতিতে ইহুদিদের একটি কট্টরপন্থি গোষ্ঠীর সমর্থন পাওয়াকে মামদানির জন্য বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
        
                            
                                    
                                                                
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
                                    
                                    
                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                                                                                    
                            
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন