মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মল্লিক মাকসুদ আহমেদ বায়েজীদ, লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ০১:৩৯ এএম

মতামত

ডেঙ্গু রুখে দেওয়ার সাধ্য কার

মল্লিক মাকসুদ আহমেদ বায়েজীদ, লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৮, ২০২৫, ০১:৩৯ এএম

ডেঙ্গু রুখে দেওয়ার সাধ্য কার

ডেঙ্গু মানেই আতঙ্ক, যা এখন রোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরঞ্চ গভীর সংকটে পরিণত হয়েছে। বাঙালিদের অদম্য সাহসিকতার  প্রশংসায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষকে পঞ্চমুখ থাকতে দেখা যায়। এ জাতি বারো মাসে কয়েকগ-া প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম দুর্যোগ উপেক্ষা ও প্রতিরোধ করে টিকে থাকার জাতি। ডেঙ্গু নামক স্বাস্থ্য সমস্যা ও সংকট উত্তরণের জন্য এ জাতিকে লড়াই করতে হচ্ছে।

প্রকৃতপক্ষে ডেঙ্গু নতুন কোনো রোগ নয়। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা। জলবায়ু ও ঋতুগত পরিবর্তনের ফলে অধুনা সারা বছরজুড়েই ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। তবে বর্ষা মৌসুমের পরবর্তী সময়গুলোতে এর প্রভাব বিস্তার ঘটে এবং আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। এডিস মশা একটু ব্যতিক্রমী। পরিষ্কার পানিতে জন্ম নেওয়া যাদের স্বভাব এবং আয়ু অত্যন্ত কম। তদুপরি এই স্বল্প আয়ুর এডিস মশা ডেঙ্গু ছাড়াও জিকা ও চিকনগুনিয়া রোগের বাহক।

এডিস মশা পরিষ্কার স্থির পানিতে ডিম পাড়তে পছন্দ করে। তবে এরা সরাসরি পানিতে ডিম না পেরে পাত্রের ভেতরের ভেজা দেয়ারে জলরেখার ঠিক ওপরে ডিম পাড়ে। এই কারণে তাদের কন্টেইনার ব্রিডার বা পাত্রে বংশবিস্তারকারী বলা হয়।

সাধারণত ঘর বা বাড়ির আশপাশে ফেলে রাখা পাত্র যেমন পুরোনো টায়ার ফুলের নিচে ফুলের টবের নিচে জমে থাকা পানি, ডেকেলবিহীন পানির চৌবাচ্চা, ড্রাম বা ব্যারেল, পরিত্যক্ত বোতল, টিনের ক্যান, নির্মাণাধীন ভবনের জমে থাকা পানি। এডিস মশা মূলত দিনের বেলায় সক্রিয় থাকে এবং কামড়ায় বিশেষ করে খুব ভোরে এবং সন্ধ্যার আগে তাদেরকে আমরা প্রবণতা বেশি দেখি।

২০০০ সালে প্রথম এডিসবাহিত ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। তখনকার সময় এই রোগীকে চিকিৎসা দিতে এ দেশের ডাক্তারদের বেশ চিন্তায় পড়তে হয়েছিল। সে বছর মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় একশত ছাড়িয়ে গেলেও একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছিল। তবে ২০১৫ সালে আকস্মিকভাবে ডেঙ্গু আবার বাড়তে থাকে। আক্রান্ত হন দুই হাজার ছয়শত একাত্তর জন।

গবেষণায় দেখা যায় ডেঙ্গু জ্বর রোগটি প্রথম ১৯৫২ সালে আফ্রিকাতে উদ্ভব হয়। পরবর্তীতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন ভারত শ্রীলঙ্কা থাইল্যান্ড মিয়ানমার ইন্দোনেশিয়াতে বিস্তার লাভ করে। তবে খ্রিষ্ট পূর্ব ২৬৫-৪২০ খ্রিষ্টাব্দে ডেঙ্গু মহামারি নাকি প্রথম দেখা গিয়েছিল চীনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও বিভিন্ন দেশে এর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশনের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু সংক্রমণের দিক থেকে শীর্ষস্থানীয় দেশ এবং অঞ্চলগুলোর মধ্যে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পেরু, প্যারাগুয়ে, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, বুরকিনা ফাসো, ফিজি, ফরাসি পলিনেশিয়া প্রধান। বিশ্বের মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রায় ৭০ শতাংশই এশিয়া মহাদেশে ঘটে। এই রোগটি এখন ইউরোপের কিছু অংশে এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বিশ্বের ১৭৫টি দেশের ডেঙ্গু সংক্রমণের তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সেখানে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহারে বিশ্বের শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। যদিও আক্রান্তের সংখ্যায় দেশটির অবস্থান সপ্তম। এই প্রকাশনায় ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার দেখানো হয়েছে ০.৫২ শতাংশ, যা সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া, যেখানে মৃত্যুহার ০.৪১ শতাংশ। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাস পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৪৪ হাজার ৬৯২ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৮৮ জনের, যার হার ০.৪২ শতাংশ।

মশাবাহিত রোগ সংক্রমণে ঢাকা সিটির একটা বিশেষ বদনাম রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে ঢাকায় মশা বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ডেঙ্গু এখন আর শুধু রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক সমস্যা নয়; এটি দেশের দক্ষিণ ও উপকূলীয় অঞ্চলসহ সারা দেশে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আক্রান্তের সংখ্যায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মৃত্যুহার সর্বাধিক হলেও, আক্রান্তের দিক থেকে দক্ষিণ অঞ্চলের বরিশাল বিভাগ রয়েছে উদ্বেগের কেন্দ্রে।

প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের একটি বৃহৎ অংশ ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে শনাক্ত হয়েছে।

বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলায় আক্রান্তের দিক থেকে সর্বোচ্চ রেকর্ড করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে বিভিন্ন গবেষণায়।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের দক্ষিণ ও উপকূলীয় জেলাগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পেছনে ব্যবস্থাপনায় চরম দুর্বলতা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে, অনেক এলাকায় ডেঙ্গু শনাক্তকরণের প্রাথমিক ব্যবস্থা অপ্রতুল বা দুর্বল হওয়ায় রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে পৌঁছান, যা মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। দুর্বল প্রাথমিক শনাক্তকরণ ব্যবস্থার কারণেও এই অঞ্চলে মৃত্যুর হার বেশি হয়।

দক্ষিণাঞ্চল উপকূলবর্তী  হওয়ায় এখানে আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাত বেশি হয়, যা এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। ঢাকা থেকে ডেঙ্গু ভাইরাস এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ভাইরাস দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের কারণে ঢাকার বাইরে দিন দিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকা শহরের মতো ততটা কার্যকরভাবে মশা নিধন বা লার্ভা ধ্বংসে সক্ষম হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রামীণ ও উপকূলীয় অঞ্চলে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব রয়েছে, যা দেরিতে রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসার মান নি¤œমুখী করছে।

ডেঙ্গু সমস্যা সাম্প্রতিক দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অতএব, এখনই জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক।

বাড়ির এবং আশপাশে কোথাও যেন পানি না জমে, তা নিশ্চিত করা, প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার এই জায়গাগুলো পরিষ্কার করা, পানির ট্যাঙ্ক, বালতি, ড্রাম, বা অন্য যে কোনো পানির পাত্র শক্তভাবে ঢেকে রাখতে হবে, যাতে মশা ডিম পাড়তে না পারে। ফুলের টব বা টবের নিচের প্লেট, ডাবের খোসা, টায়ার, ভাঙা হাঁড়ি-পাতিল, প্লাস্টিকের বোতল বা কৌটা এসব জায়গায় জমা জল দ্রুত সরিয়ে ফেলা এবং পরিষ্কার করতে হবে। ফ্রিজের নিচে বা এসির পাইপ থেকে বের হওয়া জল যাতে না জমে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ব্যবহৃত পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণ করতে পাত্রটি ব্লিচিং পাউডার বা সাবান দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে।

ব্যক্তিগত সুরক্ষার মাধ্যমে মশার কামড় এড়িয়ে চলা যেমন: দিনের বেলা বাইরে গেলে বা বাড়িতে থাকার সময়ও লম্বা হাতাওয়ালা জামা এবং লম্বা প্যান্ট, মোজা ও জুতা পরিধান করা, রাতে বা দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করা, শিশু ও বয়স্কদের জন্য আবশ্যক। শরীরের খোলা অংশে মশা তাড়ানোর অনুমোদিত ক্রিম, লোশন বা স্প্রে ব্যবহার করা, প্রাকৃতিক রেপেলেন্ট (যেমন লেমন ইউক্যালিপটাস অয়েল বা নিমের তেল) ব্যবহার করা যেতে পারে।

ভোরের দিকে এবং সন্ধ্যার সময় বাড়ির দরজা ও জানালা বন্ধ রাখা বা মশারোধী জাল ব্যবহার করা, যাতে মশা ঘরে প্রবেশ করতে না পারে। ঘরে রোজমেরি, পুদিনা, ভুঁইতুলসী বা লেমনগ্রাসের মতো মশা তাড়ানোর গাছ রাখা যেতে পারে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!