বাংলাদেশি শ্রমবান্ধব একটি শ্রমবাজার হলো মালয়েশিয়া। মালয়েশিয়া চাকরি বাজারের জন্য বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে, এবং বর্তমানে শ্রমিকদের জন্য সেখানে ভিসা প্রক্রিয়া ও নিয়োগ উন্মুক্ত করা হচ্ছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, মালয়েশিয়া কলিং ভিসা; এর আওতায় খুলছে নতুন শ্রমবাজার এবং কাজের সুযোগ। এটি ২০২৩-২০২৪ সালে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য নতুন করে কাজের সুযোগ তৈরির জন্য পরিকল্পিত হয়েছে।
মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগের কোটায় (কলিং ভিসা) আবেদনের সুযোগ উন্মুক্ত করা হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই আবেদন করা যাবে। কৃষি, বাগান ও খনি খাতের সব উপ-খাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদন করা যাবে। এ ছাড়া, সেবা খাতে নির্দিষ্ট কিছু উপ-খাতের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ খাতে শুধু সরকারি প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট উপ-খাতে বিদেশি কর্মী নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। আর উৎপাদন খাতের ক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোর জন্য বিদেশি কর্মী নেওয়া যাবে, যা মালয়েশিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এমআইডিএ) অনুমোদন দেবে।
আবেদন জমার নতুন নিয়ম
এবারের আবেদন শুধু সংশ্লিষ্ট খাতের এজেন্সিগুলো জমা দিতে পারবে। আগে যেভাবে নিয়োগ এজেন্ট বা নিয়োগকর্তারা সরাসরি আবেদন করতেন, এবার আর তা করা যাবে না। অনুমোদন প্রক্রিয়া প্রথমে ফরেন ওয়ার্কার্স টেকনিক্যাল কমিটি যাচাই করবে এবং পরে যৌথ কমিটি চূড়ান্ত করবে। বিদেশি কর্মী নীতিতে চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত মোট ২৪ লাখ ৬৭ হাজার ৭৫৬ জনের কোটা বহাল থাকবে। তবে ১৩তম মালয়েশিয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৬ সালের প্রথম বা দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে বিদেশি কর্মী সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হবে।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক কোন কোন খাতে আবেদন করা যাবে
কৃষি, বনায়ন, খনিজ, উৎপাদনশিল্প, নির্মাণ ও এসব খাত-সংক্রান্ত মোট ১৩টি উপ-খাতে কর্মী নেবে মালায়েশিয়া।
মালয়েশিয়া কলিং ভিসায় কীভাবে যাবেন
রেজিস্ট্রার্ড রিক্রুটিং এজেন্সি নির্বাচন
একটি এজেন্সি আপনি বেছে নিচ্ছেন তা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত। তাদের বায়রা (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ) এর সদস্য হতে হবে, যা তাদের ভালোমানের রিক্রুটিং এজেন্সি হিসেবে পরিগণিত করবে। নিশ্চিত করুন, এজেন্সির কাছে মালয়েশিয়ান কোম্পানির ডিমান্ড লেটার আছে, এবং এটি বাস্তবসম্মত ও কার্যকর।
ডিমান্ড লেটার এবং নিয়োগকর্তার কাজের প্রস্তাব
মালয়েশিয়াতে অবস্থানরত কোম্পানি বা নিয়োগকর্তার কাছ থেকে ডিমান্ড লেটার থাকা বাধ্যতামূলক। এই ডিমান্ড লেটারে আপনার কাজের ধরন, বেতন, কাজের সময়, বাসস্থান এবং চুক্তির মেয়াদ উল্লেখ থাকবে।
ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া
আপনার পাসপোর্ট, ছবি, মেডিকেল, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ভিসা আবেদন করতে হবে। আবেদনটি আপনার রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টে পাঠাবে।
ইগঊঞ রেজিস্ট্রেশন ও প্রি-ডিপারচার ট্রেনিং
বাংলাদেশে ইগঊঞ-এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন এবং ট্রেনিং নেওয়া বাধ্যতামূলক। প্রি-ডিপারচার ট্রেনিং আপনার মালয়েশিয়ায় যাওয়ার প্রস্তুতি এবং নিরাপত্তাবিষয়ক জ্ঞান প্রদান করবে।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও মেডিকেল
অর্থনৈতিক জোট উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) বা ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-এর অনুমোদিত সেন্টারে মেডিকেল পরীক্ষা করতে হবে, এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়া হবে।
বিমান টিকিট ও ফ্লাইট
ভিসা অনুমোদনের পর এজেন্সি আপনার জন্য ফ্লাইট বুকিং করবে, এবং মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর, নিয়োগকর্তা আপনাকে রিসিভ করবে এবং কাজ শুরু করবেন।
আনুমানিক খরচ (২০২৫ সালের হিসেবে)
সাধারণত খরচ নির্ভর করে পদের ধরন, কোম্পানি ও এজেন্সির চার্জের ওপর। এই খরচগুলো হলো মেডিকেল পরীক্ষা ৫,০০০- ৮,০০০ টাকা, পাসপোর্ট ৩,৪৫০ টাকা (এক্সপ্রেস), ইগঊঞ রেজিস্ট্রেশন ও ট্রেনিং ৩,০০০-৫,০০০ টাকা, এজেন্সি সার্ভিস চার্জ ৭০,০০০-১,৫০,০০০ টাকা, ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং অন্যান্য খরচ ২,০০০-৩,০০০ টাকা, বিমান টিকিট ৩০,০০০-৬০,০০০ টাকা। মোট খরচ প্রায় ১,৪৫,০০০-২,২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত।