ভারতের প্রবাদপ্রতিম সংগীতশিল্পী মান্না দে। ২০১৩ সালের আজকের দিনে ৯৪ বছর বয়সে বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে মান্না দে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি গান রেকর্ড করেন। তার গাওয়া অসংখ্য কালজয়ী গান এখনো শ্রোতা-ভক্তদের মুখে মুখে। বৈচিত্র্যের বিচারে তাকেই হিন্দি গানের ভুবনে সর্বকালের সেরা গায়ক হিসেবে স্বীকার করা হয়।
আধুনিক বাংলা গানের জগতে সর্বস্তরের শ্রোতাদের কাছে মান্না দে অত্যন্ত প্রিয় একটি নাম। কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পী ১৯১৯ সালের ১ মে জন্মগ্রহণ করেন।
মাত্র ২৩ বছর বয়সে ১৯৪২ সালে কাকা কৃষ্ণ চন্দ্র দে’র হাত ধরে বলিউডের সিনেমায় অভিষেক হয় মান্না দে’র। কাকার সংগীত পরিচালনায় ‘তামান্না’ সিনেমায় প্রথম একটি ডুয়েট গানে কণ্ঠ দেন তিনি। একক গায়ক হিসেবে ‘রামরাজ্য’ সিনেমায় প্রথম সুযোগ আসে। ১৯৪৩ সালে সেই সিনেমায় ‘গায়ি তু তো গায়ি সীতা সতী’ গানে কণ্ঠ দেন তিনি।
১৯৫০ সালের ‘মাশাল’ সিনেমার মাধ্যমে শচীন দেব বর্মণের সঙ্গে মান্না দে’র জুটি তৈরি হয়। ভারতজুড়ে মান্না দে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ১৯৫৩ সালে দো বিঘা জমিন’ সিনেমা মুক্তির পর। সলিল চৌধুরীর সুর ও সংগীতে এই সিনেমার গানেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি।
২০০৫ সালে বাংলা ভাষায় তার আত্মজীবনী ‘জীবনের জলসাঘরে’ প্রকাশিত হয়। পরে এটি ইংরেজিতে ‘মেমরীজ কাম এলাইভ’, হিন্দিতে ‘ইয়াদেন জি ওথি’এবং মারাঠী ভাষায় ‘জীবনের জলসাঘরে’ নামে অনুদিত হয়েছে। মান্না দে’র জীবন নিয়ে ‘জীবনের জলসাঘরে’ নামে একটি তথ্যচিত্র ২০০৮ সালে মুক্তি পায়। মান্নাদে সংগীত একাডেমি মান্নাদে’র সম্পূর্ণ আর্কাইভ বিকশিত ও রক্ষণাবেক্ষণ করেছে।
‘যদি কাগজে লিখ নাম’, ‘কতদিন দেখিনি তোমায়’, ‘খুব জানতে ইচ্ছে করে’, ‘সবাই তো সুখী হতে চায়’, ‘আবার হবে তো দেখা’, ‘এই কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি’, ‘তীর ভাঙা ঢেউ আর নীড় ভাঙা ঝড়’, ‘পৌষের কাছাকাছি রোদমাখা সেই দিন’, ‘শাওন রাতে যদি’, ‘সে আমার ছোট বোন’, ‘জানি তোমার প্রেমের যোগ্য আমি তো নই’, ‘ক ফোঁটা চোখের জল’, ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’সহ বহু কালজয়ী ও শ্রোতাপ্রিয় গান তিনি উপহার দিয়ে গেছেন বাংলা গানের রাজ্যে।
সংগীতজগতে তার অসামান্য অবদানের কথা স্বীকার করে ভারত সরকার ১৯৭১ সালে পদ্মশ্রী, ২০০৫ সালে পদ্মবিভূষণ এবং ২০০৯ সালে দাদাসাহেব ফালকে সম্মান দিয়েছে। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে রাজ্যের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘বঙ্গবিভূষণ’ প্রদান করে।
প্রায় সাত দশকের সংগীতজীবনে মান্না দে বাংলা ছাড়াও বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার গান গেয়েছেন। এর মধ্যে যেমন রয়েছে অসংখ্য সিনেমার গান, তেমনই রয়েছে ধ্রুপদি সংগীত, আধুনিক গান, রবীন্দ্রসংগীত আর নজরুলগীতি।