শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৫, ১২:৩৩ এএম

এখনো আঁতকে ওঠেন বেঁচে ফেরা যাত্রীরা

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৫, ১২:৩৩ এএম

এখনো আঁতকে ওঠেন  বেঁচে ফেরা যাত্রীরা

২০০৬ সালের ১১ জুলাই। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট। জয়পুরহাটের আক্কেলপুর মহিলা কলেজের পাশের তৎকালীন অরক্ষিত আমুট্ট রেলগেটে ঘটে যায় দেশের অন্যতম ভয়াবহ বাস-ট্রেন সংঘর্ষের ঘটনা। সেই ট্র্যাজেডির ১৯ বছর পার হলো। অথচ এখনো সেই দিনের কথা মনে পড়লে আঁতকে ওঠেন বেঁচে ফেরা যাত্রী ও স্বজন হারানো পরিবারগুলো।
সৈয়দপুর থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ওইদিন সজোরে ধাক্কা দিয়েছিল খেয়া পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী বাসকে। বাসটিতে ছিলেন প্রায় ৭৮ জন যাত্রী। মুহূর্তেই বাসটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ২৫ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও ১০ জন। আহত হন অন্তত ২৫ জন। আক্কেলপুর কলেজ মাঠে একসঙ্গে ১১ জনের জানাজা, সেদিনের শোকগাথা হয়ে আছে স্থানীয় মানুষের হৃদয়ে।
দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল মাত্র আধা কিলোমিটার দূরের আমুট্ট লেভেল ক্রসিংয়ে। সেসময় রেলগেটে কোনো গেট বা গেটম্যান ছিল না। বাসচালক যাত্রীদের অনুরোধ উপেক্ষা করে জেদ করে রেললাইন পার হওয়ার চেষ্টা করেন, সেই মুহূর্তেই ট্রেন এসে বাসের মাঝ বরাবর আঘাত করে।
বাসের মাঝখানে বসা ছিলেন আক্কেলপুর পৌরসদরের মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দূর থেকে ট্রেনটিকে আসতে দেখে যাত্রীরা সবাই চিৎকার করে বাস থামাতে বলছিল। কেউ কালেমা পড়ছিল, কেউ কান্না করছিল। আমি চোখ বন্ধ করে শুধু কালেমা পড়তে থাকি। তারপর আর কিছু মনে নেই। তিন দিন পর চোখ খুলে দেখি রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি। আমার হাঁটু, কলারবোন, বুকের হাড় ও হাত ভেঙে গিয়েছিল।’
আরেক যাত্রী মাসুম হোসেন বলেন, ‘আমি জয়পুরহাটে পাসপোর্ট নিতে যাচ্ছিলাম। এখনো সেই দিনের স্মৃতি মনে পড়লে গা শিউরে ওঠে। আমার চিকিৎসায় বাবা প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ করেছিলেন।’
নিহত আ. হামিদ ভাষানীর স্ত্রী নূরজাহান বেগম বলেন, ‘সেদিন আমি ঢাকায় যাচ্ছিলাম আর আমার স্বামী জয়পুরহাট কোর্টে। খবর আসে বাড়ি ফিরে আসতে হবে। জানতে পারি, তিনি আর নেই। সরকার থেকে ২০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম, কিন্তু স্বামীর অভাবে এখনো অনাহারে দিন কাটে।’
তার মেয়ে মোছা. রতœা বলেন, ‘বাবা রওনা দেওয়ার আগে আমার কাছ থেকে ছাতা নিয়ে গিয়েছিলেন। একটু পরেই শুনি মহিলা কলেজের পাশে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে। ছুটে গিয়ে দেখি, বাবাও সেই তালিকায়। এক ভাস্তেকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেই জীবন দিলেন।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক ওমপ্রকাশ আগরওয়ালা বলেন, ‘আরেকজন সাংবাদিককে নিয়ে ছুটে যাই ঘটনাস্থলে। দেখি, বাসটি প্রায় দেড়শ’ ফুট দূরে ছিটকে পড়ে আছে। আশপাশে রক্তাক্ত দেহ, কেউ ছিন্নভিন্ন, কেউ জীবনের জন্য আহাজারি করছে। আমি নিজ হাতে আ. হামিদ ভাষানীর মৃতদেহ টেনে বের করি। মনে হচ্ছিল, আক্কেলপুরের আকাশও সেদিন কেঁদেছিল।’
ঘটনার পর রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ও প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া শোক প্রকাশ করেন। স্থানীয়ভাবে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়। নিহতদের পরিবারকে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়। গঠিত হয় জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ের পৃথক তদন্ত কমিটি।

এদিকে আক্কেলপুর দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বরণে স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবিতে আক্কেলপুরবাসীর পক্ষ থেকে গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, শহীদ পরিবারের সদস্য হামিদ খান জনি, জেলা ছাত্রদলের  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আরমান হোসেন কানন, আক্কেলপুর থানা যুগ্ম আহবায়ক ছাত্রদল মেরিন হোসেন, আক্কেলপুর পৌর সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক মিলন চৌধুরী, পৌর ছাত্রদল নেতা অপূর্ব চৌধুরী, আক্কেলপুর শিক্ষার্থী পরিবার সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন সম্রাট, ছাত্রনেতা আশ্বিন প্রমুখ।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!