রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসানাত লোকমান 

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৫, ১০:৪৯ পিএম

মতামত

সহিংসতাহীন নির্বাচনের রূপরেখা: বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় পথনির্দেশ

হাসানাত লোকমান 

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৫, ১০:৪৯ পিএম

বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহিংসতাহীন সংসদ নির্বাচন জরুরী। প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহিংসতাহীন সংসদ নির্বাচন জরুরী। প্রতীকী ছবি

ভূমিকা:

গণতন্ত্র একটি রাষ্ট্রের আত্মা, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মত ও মতাদর্শই রাষ্ট্রশক্তির প্রকৃত উৎস। অথচ বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরেই জন্ম নেয় সহিংসতা, রাজনৈতিক উত্তেজনা ও দৃষ্টিকটু দলীয় দ্বন্দ্ব।

এই বাস্তবতায় প্রশ্ন আসেÍযদি আমরা জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জননিরাপত্তা নস্যাৎ করি, তবে সে গণতন্ত্র কতটুকু অর্থবহ?

এই প্রবন্ধে আমরা অনুসন্ধান করব কীভাবে বাংলাদেশে সহিংসতাহীন, বিশ্বাসযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভবÍযেখানে ব্যালট বাক্স হবে স্বাধীনতার প্রতীক, আর ভোটকেন্দ্র হবে নাগরিক অধিকার চর্চার উৎসবভূমি।

১. সহিংসতার বাস্তব প্রেক্ষাপট ও কারণসমূহ

বাংলাদেশের নির্বাচনকালীন সহিংসতা এক বহুমাত্রিক সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যর্থতার প্রতিফলন। সাধারণত যেসব কারণে এই সহিংসতা বিস্তার লাভ করে:

দলীয় দ্বন্দ্ব ও অবিশ্বাসের পরিবেশ

প্রশাসনের নিরপেক্ষতার ঘাটতি

অস্ত্র ও সন্ত্রাসভিত্তিক রাজনীতি

ভোটকেন্দ্র দখল, জালিয়াতি ও প্রতিহিংসামূলক হামলা

বিরোধীদলের দমন-পীড়ন ও প্রার্থিতায় বৈষম্য

২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন, যা গণতন্ত্রের মূল আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও ভোটের দিন সকালেই ভোটগ্রহণ প্রায় একতরফা হয়ে পড়েÍরাতে ভোট, সহিংসতা,  কারচুপি ও ভোটার অনুপস্থিতির অভিযোগ ছিল ব্যাপক।

২. সংবিধানিক কাঠামোর দৃষ্টিকোণ

বাংলাদেশের সংবিধানের ৭(১) ধারা বলছে: “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।” এবং ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন হবে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও ক্ষমতাসম্পন্ন।

তবে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে যে বিতর্ক, তা সংবিধানের এই আদর্শকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করে। ২০২২ সালের ‘নির্বাচন কমিশন গঠন আইন’ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও, রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জনে আইনটির প্রয়োগ পদ্ধতি আরও স্বচ্ছ হওয়া দরকার।

৩. সহিংসতা প্রতিরোধে সম্ভাব্য পদ্ধতি ও চিন্তাধারা

ক. নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্য গঠন

সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে, বিরোধী দলের যুক্ত অংশগ্রহণে, সর্বজনগ্রাহ্য ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এতে কমিশন রাজনৈতিক চাপমুক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারবে।

খ. নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার

যথাযথ সংবিধানিক পরিবর্তনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ প্রশাসন গঠন করা সম্ভব, যেমনÍসংসদের বাইরে বিশিষ্ট নাগরিকদের দিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার (ঈধৎবঃধশবৎ খরঃব)।
ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, বা নেপালের মতো রাষ্ট্রগুলোর মডেল বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য ফর্মুলা প্রণয়ন করা যেতে পারে।

গ. প্রযুক্তিনির্ভর স্বচ্ছ ভোটিং পদ্ধতি

ঊঠগ ব্যবহারে কারচুপি কমানো সম্ভব, তবে জনগণের আস্থা অর্জন ও স্বচ্ছ পরীক্ষার প্রয়োজন। বায়োমেট্রিক ভোটার ভেরিফিকেশন, রিয়েল-টাইম গণনা মনিটরিং ও ব্লকচেইনভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভবিষ্যতে বিবেচনাযোগ্য।

ঘ. আঞ্চলিক পর্যায়ে পর্যায়ক্রমিক নির্বাচন

একই দিনে দেশের ৩০০ আসনে নির্বাচন হলে প্রশাসনিক চাপ সৃষ্টি হয় এবং সহিংসতা ঠেকানো কঠিন হয়। তাই পর্যায়ক্রমে অঞ্চলভিত্তিক ভোটগ্রহণ করলে সুষ্ঠু তদারকি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হয়।

ঙ. রাজনৈতিক সংলাপ ও ইথিক্যাল চার্টার

সব দলের অংশগ্রহণে প্রাক-নির্বাচনী “নৈতিক আচরণবিধি” চুক্তি করা যেতে পারেÍযেখানে প্রতিশ্রুতি থাকবে নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধে, নির্বাচনের ফল মেনে নেওয়ায়, এবং বিরোধীদলীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার।

৪. নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের ভূমিকা

সুশীল সমাজ, বিশ্ববিদ্যালয়, পেশাজীবী ফোরাম ও ধর্মীয় নেতারা শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বার্তা প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক দল, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও নাগরিক সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে গঠিত স্বাধীন পর্যবেক্ষণ ইউনিট নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বাড়াতে পারে।

গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া যেন গুজব বা উসকানি ছড়াতে না পারে, সে জন্য নিয়ন্ত্রিত নয় বরং দায়িত্বশীলতা-ভিত্তিক নীতিমালা থাকা উচিত।

৫. গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির পুনর্গঠন

সহিংসতাহীন নির্বাচন কেবল প্রযুক্তি বা প্রশাসনিক ব্যবস্থার ফল নয়, এটি একটি সংস্কৃতিগত পরিবর্তন।

স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্র চর্চা ও বিতর্ক ক্লাব গড়ে তুলতে হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্যাডারনির্ভরতা পরিহার করে আদর্শনির্ভর সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।

নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে জনগণের মতামতকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি।

বিরোধী দলকে শত্রু নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখতে শেখাতে হবে।

সারকথা :
বাংলাদেশের গণতন্ত্র একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এখানে প্রতিটি নির্বাচনই একটি জাতির পরীক্ষার মতো। আমরা কি ক্ষমতার লোভে সহিংসতা ও অনিয়মকে প্রশ্রয় দেবো, নাকি শান্তি ও সুশাসনের পথে সাহসিকতা দেখাবো?

গণতন্ত্র কেবল ব্যালট বাক্সে সীমাবদ্ধ নয়Íতা হলো এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া, যা বিশ্বাস, অংশগ্রহণ, ও দায়িত্ববোধে গড়ে ওঠে। যদি আমরা সত্যিই একটি সহিংসতাহীন নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়তে চাই, তবে এখনই সময়Íবিষয়টি নিয়ে সকল পক্ষকে আন্তরিক হয়ে কাজ করা।

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের হাত থেকে বের হয়ে এসে সহিংসতাহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার ওপর। এটি কেবল আইন বা প্রযুক্তির কাজ নয়Íএটি একটি জাতিগত দায়িত্ব।

গণতন্ত্র হোক আমাদের নৈতিক চর্চা, আর নির্বাচন হোক সেই গণতন্ত্রের উৎসব। যারা ভিন্নমত পোষণ করে, তাদের জন্য স্থান থাকা চাই রাষ্ট্রের কেন্দ্রস্থলেÍকারণ মতের ভিন্নতা নয়, সহিংসতাই গণতন্ত্রের আসল শত্রু।

স্লোগান:

ভোট নয় ভয়, গণতন্ত্রে হোক জনতার জয়!

নির্বাচন হোক উৎসব, অহিংসতা হোক অঙ্গীকার।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!