টানা বৃষ্টিতে মরিচ গাছে মড়ক দেখা দিয়েছে, আর এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন ঝিনাইদহের মরিচ চাষিরা। বিভিন্ন মাঠে গাছ মরে যাওয়ায় উৎপাদন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকেরা।
প্রতিবছরের মতো এবারও ঝিনাইদহে ব্যাপক হারে মরিচের আবাদ হয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারেও সরবরাহ হয়ে থাকে এখানকার মরিচ। এ বছর জেলায় ১ হাজার ৮৩২ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪০ হেক্টর বেশি। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৭৯৫ টন। কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির ফলে খেতের পানি জমে থাকায় ও পরবর্তী তীব্র রোদের কারণে মরিচ গাছে ছত্রাকজনিত রোগ দেখা দিয়েছে। এতে গাছ মরে যাচ্ছে। ফলে বাজারে মরিচের দাম বাড়লেও কৃষকদের মুখে হাসি নেই।
বর্তমানে ঝিনাইদহের বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২১০ টাকায়। কয়েক দিন আগেও এই দাম ছিল ৭০-১১০ টাকা। তবে উৎপাদন বিপর্যয়ের আশঙ্কায় অনেকেই অপরিপক্ব মরিচ তুলেও কম দামে বিক্রি করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৫১০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। হরিণাকু-ুতে ৪১৫ হেক্টর, শৈলকুপায় ১৬৫ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১২২ হেক্টর, মহেশপুরে ২৯০ হেক্টর ও কোটচাঁদপুরে ২৯ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে।
সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের চান্দেরপোল গ্রামের কৃষক আব্দুল মোতালেব জানান, তিনি ১৫ শতক জমিতে মরিচের চাষ করেছেন। অতিবৃষ্টির কারণে ইতোমধ্যে প্রায় ৫ শতক জমির গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। একই গ্রামের কৃষক আবজাল হোসেন ও জবেদ আলীও একই সমস্যায় পড়েছেন।
আড়ুয়াকান্দী গ্রামের রোকন মোল্লা বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে মরিচ লাগিয়েছি। প্রতি শতকে প্রায় ১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দাম বাড়লেও গাছ মরে যাওয়ায় লাভের সম্ভাবনা কম।’ একই ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামের কৃষক মিলন হোসেন জানান, ‘বাজারে অল্প কিছু মরিচ বিক্রি করেছি। তবে গাছ মরে যাওয়ায় বাকিটা পাওয়া নিয়েই শঙ্কা।’ কোটচাঁদপুর উপজেলার তালিনা ও ইকড়া গ্রামের চাষিরাও মরিচ গাছ মরে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই মৌসুমে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে গাছ মরে যাওয়ার খবর পেয়েছি। কৃষকদের ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পাশাপাশি বৃষ্টির সময় খেত থেকে মরিচ না তোলা এবং খেতের ভেতরে হেঁটে না চলার পরামর্শ দিচ্ছি।’
তিনি আরও জানান, ঝিনাইদহ তুলনামূলক উঁচু এলাকা হওয়ায় বন্যা না হলেও অতিবৃষ্টি ফসলের ক্ষতি করতে পারে। তাই এ সময় কৃষকদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।