ঢাকা বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

ব্যবসায়ীর নামে সরকারি ঘর বরাদ্দ, ক্ষুব্ধ ভূমিহীনরা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ০২:০০ এএম

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় কোটিপতি ব্যবসায়ী ও বিত্তশালীদের নামে সরকারি ঘর বরাদ্দ দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন স্থানীয় ভূমিহীনরা। ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে (তহসিলদার) ঘরের চাবি হস্তান্তর করতে না দিয়ে ফিরিয়ে দেন তারা। এ ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা (এসি ল্যান্ড) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

ভূমিহীনদের অভিযোগ, দলীয় প্রভাব এবং অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তারা গত ১০ জুলাই আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিধান কান্তি হালদারের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
জানা গেছে, ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের কামারপাড়া ও পুরান ভেলাবাড়ী গুচ্ছগ্রামে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫২টি পুরোনো ঘর ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে কামারপাড়ায় ১০টি পুরাতন ঘরের জায়গায় নির্মিত হয় ৬টি নতুন ঘর। এসব ঘরের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বিত্তশালী আজাহার আলী, ফজর আলী ও হোসেন আলীর নামে, যাদের কারো কারো জমি, দোকান, গরুর খামার ও পাকা বাড়ি রয়েছে।

ভূমিহীনদের অভিযোগ, কামারপাড়া গুচ্ছগ্রামে দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে ১ নম্বর ঘরে বসবাস করে আসছিলেন ষাটোর্ধ্ব বিধবা শেফালী বেগম। স্বামী মারা গেছেন ১৭ বছর আগে। ঘর নির্মাণের সময় তার ঘরটি ভেঙে দেওয়া হলেও তাকে নতুন ঘর দেওয়া হয়নি। সেই ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয় স্থানীয় ধনী কোরবান আলীর ছেলে ফজর আলীকে।
শেফালী বেগম বলেন, ‘আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। ২৬ বছর ধরে সেই ঘরেই ছিলাম। এখন অন্যের জমিতে থাকছি। নতুন ঘর পাব বলে অপেক্ষায় ছিলাম। অথচ তা দেওয়া হলো একজন ধনী ব্যক্তিকে। আমি শুধু আমার ঘরটা ফেরত চাই।’
অভিযোগ রয়েছে, বিতর্কিত বরাদ্দপ্রাপ্তদের মধ্যে আজাহার আলী নামের একজন ব্যক্তি রয়েছেন যিনি ভেলাবাড়ী বাজারে ৪টি দোকানের মালিক। রয়েছে তার পাকা দালান, ৮ বিঘা জমি এবং বিপুল অর্থসম্পদ। অন্যদিকে, হোসেন আলী নামের আরেকজনের রয়েছে হার্ডওয়্যারের দোকান ও গরুর খামার।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, পুরান ভেলাবাড়ী গুচ্ছগ্রামে নির্মিত ৪৬টি নতুন ঘরের মধ্যে অনেক বিত্তশালী ব্যক্তি ঘর পেয়েছেন। অথচ প্রকৃত ভূমিহীন ও হতদরিদ্র পরিবার, যারা বহু বছর ধরে খাসজমি বা অন্যের জমিতে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছেন, তারা বঞ্চিত হয়েছেন। নিয়ম ছিল, পুরাতন ঘরের বাসিন্দারা অগ্রাধিকার পাবেন, কিন্তু তা উপেক্ষা করে অর্থ ও প্রভাবশালীদের সুপারিশে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ভূমিহীনদের দাবি, ঘর বরাদ্দের তালিকা যাচাই-বাছাই না করে সরাসরি বিত্তশালীদের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রকৃত অসহায় মানুষরা ঘর থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

তবে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিধান কান্তি হালদার বলেন, ‘ঘর বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক ভূমিহীনদের মধ্যে ঘর বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে।’