ঢাকা শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫

খোকার অপেক্ষায় এখনো দরজায় বসে থাকেন মা

মো. বায়েজিদ, দশমিনা (পটুয়াখালী)
প্রকাশিত: জুলাই ১৯, ২০২৫, ০২:১০ এএম

বিসিএস ক্যাডার হবে, মা-বাবার স্বপ্নপূরণ করবে, এমনটাই চেয়েছিলেন শহিদ জিহাদ। কিন্তু সেই স্বপ্নের কুঁড়ি ফুটে ওঠার আগেই ঝরে গেল রক্তের ধারা হয়ে। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিলে স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের গুলিতে প্রাণ হারালেন এই মেধাবী তরুণ। আজ সেই নির্মম হত্যাকা-ের এক বছর পেরিয়ে গেলেও পরিবার এখনো পায়নি ন্যায়ের আশ্বাস, বিচার তো প্রতীক্ষা।

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার দিগন্ত সড়ক এলাকার বাসিন্দা শহিদ জিহাদ ছিলেন নুরুল আমিন মোল্লার ছোট ছেলে। মা শাহিনুর বেগম প্রতিদিন ছেলের ছবিটা বুকে চেপে ধরে বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন। ভাবেন, যদি ফিরে আসে তার আদরের জিহাদ। কখনো জেগে, কখনো ঘুমের ঘোরে ছেলের ডাক শোনেন তিনি, ‘মা আমি এসেছি।’ কিন্তু ঘুম ভাঙলেই ছেলের অনুপস্থিতি যেন আবার বিদীর্ণ করে তার হৃদয়।

শহিদ জিহাদ ২০১৬ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি, ২০১৮ সালে স্যার সলিমুল্লাহ কলেজ থেকে এইচএসসি এবং এরপর কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স শেষ করেন। এমএ প্রথম বর্ষে পড়ার সময়েই স্বপ্ন দেখতেন প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে দেশের জন্য কাজ করার। কিন্তু সেই স্বপ্ন শেষ হলো ১৯ জুলাই বিকেলে, ঢাকা যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলন শেষে বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে।

সহপাঠীরা তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষরক্ষা হয়নি। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই না করেই তিনি শহিদ হন। পরদিন ২০ জুলাই রাত ১০টার দিকে তার নিথর দেহ বাড়িতে পৌঁছায়। পুলিশি বাধা, চাপ ও আতঙ্কের মধ্যে ২১ জুলাই সকাল ৬টায় সদর ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে শায়িত করা হয় তাকে।

জিহাদের মা বলেন, ‘আমার ছেলে কারো ক্ষতি করেনি। শুধু অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিল। তাই কি তাকে গুলি করে মেরে ফেলতে হলো? এখন শুধু একটা চাওয়া, যারা আমার বুকের ধনকে মেরে ফেলেছে, তাদের বিচার দেখে মরতে চাই।’

জিহাদের বাবা বলেন, ‘মৃত্যুর দুই ঘণ্টা আগে আমার সঙ্গে কথা হয়। বলেছিল, বাবা, আমি ভাত খেয়ে একটু ঘুমাচ্ছি। এরপরই খবর পাই, আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। কিছুক্ষণ পর জানতে পারি, সে আর নেই। মনে হয়েছিল, আমার মাথার ওপর আকাশটা ভেঙে পড়েছে। সেই থেকে আমরা শুধু বাঁচছি, মরছি প্রতিদিন।’

জিহাদের পরিবারের অভিযোগ, মৃত্যুর পর দাফনের সময়ও পুলিশি বাধা, ভয়ভীতি, এমনকি গুলি করার হুমকিও পান তারা। শহিদ জিহাদের চাচা রুহুল আমিন মোল্লাসহ পরিবারের ওপর ছিল কঠোর নজরদারি।

আজ শহিদ জিহাদের মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হলো। অথচ বিচার এখনো শুরুই হয়নি। পরিবার চোখে-মুখে শুধুই এক প্রশ্ন, ছেলের খুনিরা কি কখনো শাস্তি পাবে? নাকি এই বিচারও হারিয়ে যাবে রাষ্ট্রীয় নীরবতার দেয়ালে?