জনবলসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি। দীর্ঘদিন ধরে সংকট থাকলেও প্রশাসনিক কারণে এসব সমাধান হচ্ছে না। ফলে দিন দিন সমস্যা আরও বাড়ছে। ফলে খামার থেকে চাষিদের চাহিদানুসারে মানসম্পন্ন রেণু ও পোনা সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
জানা যায়, বুড়িচং সরকারি মৎস্য বীজ খামারের (হ্যাচারি) আয়াতন প্রায় সাড়ে তিন হেক্টর। খামারে নার্সারি পুকুর, লালন পুকুর ও ব্রুড মজুদ পুকুরসহ ছোট-বড় আটটি পুকুর রয়েছে। খামার থেকে প্রতিবছর চাষিদের চাহিদানুসারে মানসম্পন্ন রুইজাতীয় ও দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের রেণু ও পোনা সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া প্রতিবছর ২০ জন করে দুটি ব্যাচ মৎস্যচাষি, নার্সার ও পোনাচাষিদের কার্পজাতীয় বিভিন্ন মাছের আধুনিক চাষ প্রযুক্তি ও কলাকৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
এদিকে, খামারটিতে উৎপাদন কার্যক্রম চললেও অফিস ভবনটি পরিত্যক্ত। শ্রমিকদের শেডে খামার ব্যবস্থাপক অফিস কাম বাসা হিসেবে ব্যবহার করছেন। পাঁচ সদস্যের একটি জনবল থাকার স্থলে খামার ব্যবস্থাপক, হ্যাচারি অ্যাটেনডেন্ট ও অফিস সহকারী পদের মাত্র তিন কাজ করেন। আবার বিশাল সীমানাপ্রাচীর ঘেরা খামারটির নিরাপত্তায় নেই কোনো নিরাপত্তা প্রহরী। হ্যাচারির বাইরে এখানকার পুকুরগুলোয় পোনা জাতীয় মাছ চাষ হয়। খামারের এক ও দুই নম্বর পুকুর দুটি অনেকটাই পরিত্যক্ত।
খামারের প্রবেশপথে দুটিসহ বিভিন্ন স্থান এক ডজনের বেশি কাঠ জাতীয় মরা গাছ রয়েছে। কাটার অভাবে দীর্ঘদিনে শুকিয়ে গাছগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এতে যেকোনো সময় জানমালের ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এক নম্বর পুকুরের পশ্চিম পাড় ঘেঁষে থাকা একাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটিও ঝুঁকিতে রয়েছে। বৈদ্যুতের তার হেলে নিচে পড়ায় সেই তার শুকনো গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। খামারের চারপাশজুড়ে থাকা সীমানায় পর্যাপ্ত আলো না থাকায় সন্ধ্যার পর বহিরাগতদের অবাধে প্রবেশ করতে দেখা যায়। প্রতিনিয়ত খামারের বিভিন্ন পুকুর পাড়ে বহিরাগতরা মাদক সেবন করে। পশ্চিম পাশে নির্মাণাধীন ভবনের পয়ঃনিষ্কাশনের পানি সীমানাপ্রাচীর ফুটো করে পাইপ দিয়ে খামারের ভেতর ফেলা হচ্ছে।
খামার ব্যবস্থাপক শামছি আরা ফেরদৌসী জানান, বর্তমানে ময়লা-আবর্জনা ফেলানোসহ সীমানাপ্রাচীর ফুটো করে বাসা-বাড়ি ও গ্যারেজের ময়লা পানি খামারের ভেতর ফেলা হচ্ছে। এর কারণে পুকুরের মাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিবাদ করলেও তারা বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। আবার সন্ধ্যার পর বহিরাগতরা খামারে প্রবেশ করে-এটিও একটা বড় সমস্যা।
খামার ব্যবস্থাপক আরও জানান, লোকবলসহ অন্য সংকট দূর করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে খামারে প্রায় ৩৩ কেজি রেণুসহ উৎপাদিত পোনা বিক্রি করে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।