ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

দিনদুপুরে বেড়ছে ছিনতাই টার্গেট ব্যাংক গ্রাহকেরা

ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৯:০৬ এএম

ঢাকার ধামরাইয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে রাস্তায় এলেই দিনদুপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এক সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। পৃথক দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছিনতাইকারীরা ১৪ লাখ ৪২ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। মামলা হলেও এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি প্রশাসন।

এক সপ্তাহের মধ্যে দিনদুপুরে এমন দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় এই এলাকার মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে ভয় আর আতঙ্ক। 
জানা যায়, গত সোমবার দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের শ্রীরামপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মো. কামাল হোসেন নামের এক ইটভাটার সরদারের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা ছিনতাই করে ছিনতাইকারীরা। এর আগে গত বুধবার ধামরাই-কালামপুর আঞ্চলিক সড়কের কেলিয়া নদীর পার থেকে আরিফ হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। 

এ ঘটনার পরদিনই আরিফ হোসেন বাদী হয়ে ধামরাই থানায় অজ্ঞাত নামা চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে ঘটনার সাত দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার বা ছিনতাই হওয়া টাকা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এর ঠিক ছয় দিনের মাথায় আবার আরেকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটল। 

আট লাখ টাকা ছিনতাই হওয়া ভুক্তভোগী মো. কামাল হোসেন মানিকগঞ্জের হরিরামপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি ধামরাইয়ের একটি ইটভাটার লেবার (শ্রমিকদের) সরদার।  

ভুক্তভোগী কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি ধামরাইয়ের কালামপুরের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের শাখা থেকে আট লাখ টাকা উত্তোলন করি। পরে সেখান থেকে মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেলযোগে রওনা দেই। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের শ্রীরামপুর এলাকায় পৌঁছলে একটি প্রাইভেট কারে ছিনতাইকারীরা আমার গতিরোধ করে। পরে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক আমার টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে যায়।’ 

এর ঠিক ছয় দিন আগে গত বুধবার আরিফ নামের এক ব্যবসায়ী ধামরাই বাজারের আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা নিয়ে অটোরিকশা করে সোমভাগে তার নিজ বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। ধামরাই-কালামপুর আঞ্চলিক সড়কের কেলিয়া নদীর পারে একটি সাদা রঙের নোয়া গাড়ি নিয়ে এসে ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক গাড়িতে উঠিয়ে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে মারধর করে এবং সঙ্গে থাকা ৬ লাখ ৪২ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। পরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের সুতিপাড়া এলাকায় ওই ব্যবসায়ীকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে ছিনতাইকারীরা চলে যায়। পরদিন তিনি ধামরাই থানায় একটি মামলা করেন। 

এক সপ্তাহের মধ্যে এমন দুটি ঘটনায় ধামরাইয়ের মানুষের মনে ভয় ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। দুটি ঘটনাই ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে ভয় পাচ্ছেন অনেকেই। স্থানীয়রা বলছেন, ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বের হলেই ছিনতাই হচ্ছে। এর মানে ব্যাংকের ভেতর থেকেই ছিনতাইকারীরা নজরে রাখছে, কে কত টাকা উত্তোলন করছে। কার টাকা ছিনতাই হবে, তা ব্যাংকের ভেতর থেকেই নির্ধারণ হচ্ছে এবং ব্যাংক থেকে বের হলেই রাস্তায় টাকা ছিনতাই করছে। এমন হলে মানুষজন তো ব্যাংকেই যাওয়া বন্ধ করে দেবে। এই ছিনতাইকারীদের দ্রুতই আইনের আওতায় আনতে স্থানীয়রা প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান। 

উপজেলার কালামপুর শাখার ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ম্যানেজার আব্দুল মান্নান বলেন,‘আমি কয়েক দিন ধরেই ছুটিতে আছি। আমাদের ব্যাংকে সিসিটিভি রয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখলেই বোঝা যাবে ব্যাংক থেকে কেউ ফলো করেছে কিনা।’ 

ধামরাই থানার এসআই এস এম কাওসার সুলতান বলেন, ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী অভিযোগ দিয়েছেন, মামলার কাজ প্রক্রিয়াধীন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।  

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবির বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজ ছাড়া তো এটার কোনো উপায় থাকে না। গত ২৩ জুলাইয়ের ঘটনায় ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে একজনকে সন্দেহ করা হয়েছিল, তাকে নিয়েও আসা হয়েছিল কিন্তু সে এলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। পরবর্তী সময়ে আমাদের টেকনোলজি ব্যবহার করে আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ইনশা আল্লাহ, দ্রুতই তাদের গ্রেপ্তার করা যাবে।’