ঢাকা সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ নিয়ে ভাবছে কমিশন

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২৫, ০৬:১৩ এএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

জুলাই সনদ নিয়ে ‘বিশেষ আদেশ’জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট এবং আগামি জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা দেওয়ার সুপারিশের পরিকল্পনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে বিশেষ আদেশের ভিত্তি কি হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে কমিশন।

প্রাথমিকভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের অভিপ্রায়ের আদেশ জারির পরামর্শ এসেছে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে।

কমিশনের সূত্র বলছে, রোববার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের কমিশনের কার্যালয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশনের বৈঠক হয়।

বিশেষজ্ঞ প্যানেলে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন এই বৈঠকে অংশ নেন।

বৈঠকের শুরুতে কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান বিশেষজ্ঞদের সামনে তুলে ধরা হয়। একইসঙ্গে কমিশনের তৈরি করা বিশেষ আদেশের খসড়া নিয়েও কথা হয়। সেখানে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয় কমিশনের কাছে ‘বিশেষ আদেশের’ পূর্ণাঙ্গ টেক্সট চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে বিশেষজ্ঞরা দেবেন। একটি আদেশ জারি করে গণভোট করতে বলা হবে, সর্বশেষ জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ক্ষমতা দিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হবে।

জানা গেছে, বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে আগামী সপ্তাহের শুরুতেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নে পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ সরকারের চায় ঐকমত্য কমিশন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দিতে চাই। যেখানে সবকিছু সুনির্দিষ্ট এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে থাকবে। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।”

নানান জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত শুক্রবার জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষরে করেছে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনসহ ২৪টি রাজনৈতিক দল ও জোট। আর রোববার স্বাক্ষর করে গণফোরাম।

অন্যদিকে সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা না থাকায় স্বাক্ষর করেনি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতাদের তৈরি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এছাড়া বামপন্থী দল সিপিবি, বাসদসহ বাম গণতান্ত্রিক জোটের ৪ দল স্বাক্ষর করেনি।

রোববারে বৈঠকে জুলাই আদেশের ভিত্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কমিশন আলোচনা করে বলে জানা গেছে। বিশেষজ্ঞরা প্রথমে বলেছিলেন জুলাই ঘোষণাপত্রের ২২ ধারা ক্ষমতাবলে সরকার আদেশ জারি করবে। যা নিয়ে সংলাপে দলগুলো সমালোচনা করেছিল।

বিশেষ আদেশের ভিত্তি কি হতে পারে -এমন প্রশ্নে বৈঠকে অংশ নেওয়া এক বিশেষজ্ঞ বলেন, আদেশের ভূমিকায় লেখা থাকবে কিভাবে আদেশ জারি করার ক্ষমতা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পেল। সেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের কথা চলে আসবে। কারণ গণঅভ্যুত্থানের কারণে আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা বর্তমান সরকার রাখে। সেটাকে ধরেই আমাদের এগোতে হবে।

এক্ষেত্রে জুলাই ঘোষণাপত্রের ধারা উল্লেখ না করে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে আদেশ জারি করার সুপারিশের চিন্তা আমরা করছি।

বিশেষ আদেশ রাষ্ট্রপতি নাকি প্রধান উপদেষ্টা জারি করবেন তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়ে বলে সূত্রে জানা গেছে। সেখানে আলোচনা হয়, সাধারণত অধ্যাদেশ বা প্রজ্ঞাপন রাষ্ট্রপতিই জারি করে থাকেন। কিন্তু বিশেষ আদেশ তো বিশেষ ক্ষমতাবলে দেওয়া হবে, তাতো অধ্যাদেশ বা প্রজ্ঞাপন হবে না। তাই আদেশটি কে জারি করবে তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট এবং ভোটের আগে গণভোট -এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত। সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে বিএনপিসহ অর্ধেকের বেশি দল ভোটের দিন গণভোট চেয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপিসহ ইসলামপন্থী দলগুলো ভোটের আগেই গণভোট চেয়েছে। এ অবস্থায় গণভোটের দিনক্ষণ সরকারের উপরে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই প্রসঙ্গে এক বিশেষজ্ঞ বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ সংবিধান সংস্কার পরিষদকে ছয় মাস মেয়াদ দেওয়ার পক্ষে। আবার কেউ নয় মাস মেয়াদ দেওয়ার পক্ষে। কম হলে ছয় মাস, বেশি হলে নয় মাসের সুপারিশ দেওয়া হবে।