ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

সেতুর বেয়ারিং প্যাড চুরি ঝুঁকিতে যান চলাচল

হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ১০:০২ এএম

কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুর-ভালুকা মহাসড়কের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত সেতুর মাঝখান থেকে ব্রিজ বেয়ারিং প্যাড চুরি করে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে করে প্রতিদিন শত শত ভারী যানবাহন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সেতু দিয়ে চলাচল করছে। ময়মনসিংহের পাগলা থানায় সেতুটির অবস্থান হলেও এটিকে সবাই হোসেনপুর ব্রিজ নামেই চিনে।

জানা গেছে, এই সেতুটি পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে দ্রুত সংযোগ স্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। কিশোরগঞ্জ-ভৈরব মহাসড়ককে ময়মনসিংহের ভালুকার সঙ্গে সংযুক্ত করে গাজীপুর, মাওনা ও ভালুকা শিল্পাঞ্চলের পণ্যবাহী ট্রাকগুলো যানজট ছাড়াই চট্টগ্রাম ও সিলেট অভিমুখে চলাচল করতে পারছে। কিন্তু সেতুর নিরাপত্তাহীনতা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা এখন ভয়ানক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেয়ারিং প্যাড চুরি যাওয়ায় সেতুর নির্দিষ্ট স্থানটি ফাঁকা হয়ে গেছে এবং প্রতিদিন সেটি আরও বড় হচ্ছে। বেয়ারিং প্যাড একটি সেতুর ভার সঠিকভাবে বণ্টন, ভূমিকম্প প্রতিরোধ এবং তাপমাত্রা পরিবর্তনের সময় সেতুকে সুরক্ষিত রাখার গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ। এটি না থাকায় সেতুটি এখন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুটি দুই দশক আগে নির্মাণ করা হলেও এর রক্ষণাবেক্ষণের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ করেছেন যানবাহন চালক ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা জানান, সেতুর নিচের বেজমেন্টের মাটি সরে গেলেও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই।

স্থানীয়রা আরও জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের আশপাশের এলাকাগুলোতে বালু ও মাটি খনন বন্ধের সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় সেতুর কাছ থেকেই নিয়মিত বালু ও মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে, যা সেতুর স্থায়িত্বের জন্য মারাত্মক হুমকি।

সেতুর নিচের এলাকা মাদকসেবীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যদিও এলাকাটি পাগলা থানার আওতায় থাকায় এখানে একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, তবুও নিয়মিত টহল বা নজরদারি নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ট্রাকচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিদিন মাল নিয়ে এই সেতু পার হই। নিচে তাকালে দেখি একটা জায়গা ফাঁকা। মনে হয় যেকোনো সময় ধসে যাবে। ভয় লাগে, কিন্তু বিকল্প পথ নাই।
স্থানীয় অটোচালক শরিফ মিয়া বলেন, রাত হলে এই সেতুতে অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না। হেডলাইটের আলোতেও স্পষ্ট বোঝা যায় না কোথায় গর্ত, কোথায় ফাঁকা। ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাই।

ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল বাশার মো. সাদ্দাম হোসেন জানান, ‘চুরি হওয়া বেয়ারিং প্যাড দ্রুত লাগানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া সেতুতে পর্যাপ্ত লাইটিং ব্যবস্থাও স্থাপন করা হবে।’ বর্তমানে এই সেতুতে কোনো আলো না থাকায় রাতের বেলায় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাচ্ছে।