ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

ঘরবাড়ি গেল, ভিটে গেল ছেলের কবরটাও যাচ্ছে..!

বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৫, ০৫:৪১ এএম
  • পদ্মার ভাঙনে অন্তত ২০টি কবর বিলীন হওয়ার পথে
  • ছেলের কবর হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বৃদ্ধা জহুরা বেগম
  • ১০ বছর আগে বিষাক্ত পাউরুটি খেয়ে মারা যায় তার ছেলে

পদ্মার তীব্র ভাঙন কেবল জমি, ঘরবাড়ি বা ফসলই গিলে খাচ্ছে না, কেড়ে নিচ্ছে মানুষের সবচেয়ে প্রিয়জনের স্মৃতিচিহ্নও। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের দিয়ারকাদিরপুর চরে অন্তত ২০টি কবর নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। এ কবরগুলোর একটিতে শুয়ে ছিলেন জহুরা বেগমের একমাত্র ছেলে সুমন। এখন সেই কবরও পদ্মার ঢেউয়ে ভেঙে পড়ছে।

গত সোমবার বিকেলে ছেলের কবরের পাশে বসে অশ্রু ঝরাচ্ছিলেন ষাটোর্ধ্ব জহুরা বেগম। তিনি বলেন, ‘১০ বছর আগে মাঠে বিষ মাখানো পাউরুটি খেয়ে মারা যায় আমার ছেলে। তখন তাকে ভাঙনের পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে দাফন করেছিলাম। এখন নদী সেই জায়গাটুকুও নিয়ে যাচ্ছে।’

স্থানীয়দের ভাষ্য, গত এক দশকে এ চরের বহু জমি, বসতভিটা ও স্থাপনা পদ্মার পেটে চলে গেছে। একসময় যেখানে ধানের খেত আর কবরস্থান ছিল, এখন সেখানে নদীর ঢেউ আছড়ে পড়ে। নিরাপত্তার খোঁজে নৌকায় করে অনেকেই চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। এরই মধ্যে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অসংখ্য বাড়িঘর।

চকরাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আলম বলেন, ‘শুধু কবর নয়, নদীভাঙনে বহু পরিবার গৃহহারা হয়েছে। স্কুল, দোকান, ফসলি জমি সবই হারিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতি আর পুষিয়ে নেওয়া যাবে না।’

চকরাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান জানান, তাদের স্কুলটি এ পর্যন্ত তিনবার স্থানান্তর করতে হয়েছে। ‘কবর থেকে শুরু করে শত শত বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। পদ্মার রাক্ষুসে ভাঙন ঠেকাতে এখনই উদ্যোগ দরকার।’

এদিকে রাজশাহী শহরের কাছেও বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মা। বর্তমানে পানি বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে। ঝুঁকি এড়াতে শহরের টি-বাঁধে মানুষের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মি আক্তার জানান, ভাঙনকবলিত এলাকায় টিম পাঠিয়ে পরিস্থিতি পরিদর্শন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে, পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে।