রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার প্রত্যন্ত বারমল্লিকা গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্র রাহুল শেখ (১৫) প্রমাণ করল ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম থাকলে অসম্ভব বলে কিছু নেই। মাত্র চার দিনে নিজের হাতে বানালেন বাংলাদেশ বিমানের ৭৮৭ ‘অচিন পাখি’ মডেলের একটি উড়োজাহাজ, যা সফলভাবে আকাশে ওড়াতেও সক্ষম হয়েছে।
রাহুল স্থানীয় রামদিয়া বেনীমাধব বিপিনচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এবং কৃষক শামসুল শেখ ও গৃহিণী আলেয়া বেগমের সন্তান। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সে সবচেয়ে ছোট। ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান ও যন্ত্রপাতির প্রতি তার গভীর আগ্রহ। ছোটখাটো জিনিস বানানোর কারণে গ্রামে সে ‘ক্ষুদে বিজ্ঞানী’ নামে পরিচিত।
মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচে ইউটিউব থেকে শেখা জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছে উড়োজাহাজটি। প্রথম মডেলটি ওজন বেশি হওয়ায় উড়তে ব্যর্থ হলে অনেকে হাসাহাসি করলেও রাহুল হাল ছাড়েনি। চার দিনের টানা পরিশ্রমে দ্বিতীয় মডেলটি সফলভাবে আকাশে উড়াতে সক্ষম হয় সে।
উড়োজাহাজ দেখতে এখন প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছে এলাকার মানুষ। তার মা আলেয়া বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে দিন-রাত পরিশ্রম করে বিমান বানিয়েছে। এত লোক যখন ওর কাজ দেখতে আসে, আমার খুব ভালো লাগে। দোয়া করি, ভবিষ্যতে আরও বড় কিছু আবিষ্কার করুক।’
বাবা শামসুল শেখ বলেন, ‘রাহুল শুধু বিমানই নয়, ফ্যান-লাইটসহ অনেক কিছু বানিয়েছে। ওর প্রতি আমার সবসময় সহযোগিতা থাকবে।’
প্রতিবেশী মিঠু মল্লিক বলেন, ‘রাজবাড়ী জেলার মধ্যে একমাত্র রাহুলই এমন একটি বিমান তৈরি করেছে। ও আমাদের জেলার গর্ব। ওর জন্য অনেক দোয়া করি ও অনেক বড় হোক।’
রামদিয়া বেনীমাধব বিপিনচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শংকর পোদ্দার বলেন, ‘রাহুল শেখ আমার স্কুলের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। পড়ালেখায় সে অতটা মনোযোগী না হলেও কারিগরি দিক থেকে তার অসম্ভব প্রতিভা রয়েছে। সে বাড়িতে বসে ইউটিউব দেখে জ্ঞান নিয়ে ইলেকট্রনিকস বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে। সম্প্রতি ইউটিউব দেখে উড়োজাহাজ বানিয়ে সেটা আকাশে উড়িয়েছে। বিষয়টি শুনে আমরা অবাক হয়েছি। তার মধ্যে ভালো প্রতিভা রয়েছে। রাহুলের ইচ্ছা, সে বড় হয়ে প্রকৌশলী হবে।’