সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। পুকুর, কৃষি জমি ও বীজতলা পানিতে ভেসে হয় একাকার। আর ধানের জমিতে জন্ম নেয় বড় বড় কচুরিপানায়। জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজে আসছে না সরকারি খালগুলো। হচ্ছে না পানি নিষ্কাশন, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কৃষি আবাদ। আর এভাবেই অনাবাদি পড়ে থাকছে শত শত বিঘা দুই ফসলি জমি। সেই সঙ্গে বৃষ্টি মৌসুমে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে হাজারো পরিবার। এমন চিত্র দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভা ও মুড়াপাড়া, ভুলতা, গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের অন্তর্ভুক্ত প্রায় ২০ গ্রামে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাঞ্চন পৌরসভা, মুড়াপাড়া, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ২০ গ্রামে প্রায় ২২ হাজার বিঘা কৃষি জমি রয়েছে। এসব এলাকার কোথাও ৬ মাস কোথাও আবার সারা বছরই কৃত্রিম জলাবদ্ধতা থাকে। এতে প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষি জমিই অনাবাদি পড়ে থাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি খাল দখল ও খালের ওপর বাগানবাড়ি, বালুর গদি, ফ্যাক্টরি এবং বসতবাড়ি নির্মাণের কারণেই পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
টেকপাড়া এলাকার আব্দুস সামাদ বলেন, এলাকার ৪-৫টি খাল বেআইনিভাবে দখল করে খালের ওপরে অর্ধশত পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিপূর্বে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল পাইনি। যারা খাল দখল করছে তারাই আবার জলাবদ্ধতার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে।
বেলতলা এলাকাল শাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, সরকারি খাল ও সরকারি একোয়ারকৃত জমিতে বালু ভরাট করে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছে এনডিই রেডিমিক্স, মেট্রো ওয়ার্কশপ, ইনডেক্স পাওয়ারপ্লান্ট ও এটলাস টয়লেট্রিস নামক প্রতিষ্ঠান। খালের পানি চলাচল বন্ধ করে দেদার ব্যবসা করছে কতিপয় মহল। আর জলাবদ্ধতায় ভুগছে গ্রামের সাধারণ মানুষ, কেউ প্রতিবাদ করার সাহসটুকু পাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক বলেন, কৃষিপ্রধান দেশে এখন চলছে আবাসন ব্যবসা। প্রশাসনের লোকজন কিছুই বলে না, জোরপূর্বক জমি দখল করে। কিছু বললেই বাড়িঘরে হামলা দেয়। আ.লীগ থাকতেও জমি জবরদখল করত এখনো করছে।
জানা যায়, ১৯৮১ সালে কাঞ্চন পৌরসভা ও মুড়াপাড়া, ভুলতা, গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের প্রায় ২০ গ্রামের ২২ হাজার বিঘা কৃষি জমি চাষাবাদের সুবিধার্থে ‘নারায়ণগঞ্জ-নরসিংদী ইরিগেশন প্রজেক্টর (এনএনডি) আওতায় এনে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। বেড়িবাঁধের ভেতরে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে (একোয়ার) সরকারিভাবে খনন করা হয় খাল। খালের পানি নিষ্কাশন ও উত্তোলনের কাজে স্থাপন করা হয় বানিয়াদী সেচ প্রকল্প। বসানো হয় ৪টি সেচপাম্প। তাতে বর্ষাকালে বা ভারি বর্ষণে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন ও আবাদ মৌসুমে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো হয়। অথচ বছরের পর বছর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নজরধারী না থাকায় অধিগ্রহণকৃত জমিতে গড়ে ওঠেছে শত শত স্থাপনা। বছরের পর বছর এমন দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় বর্তমানে অধিকাংশ খালগুলোই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।
এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে ঢাকা বাইপাস প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদ শাহরিয়ারের ব্যবহৃত মুঠোফেনে একাধিকবার ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা সরকারি খাল, রাস্তা ও খাস জমি উদ্ধারে কাজ করছি। ইতিপূর্বে ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি খাল ও রাস্তা উদ্ধার করেছি। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসনে আমার মোবাইল কোর্ট টিম সর্বদা কাজ করছে।