- কাদা আর জলাবদ্ধতায় চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে
- যানবাহন প্রায়ই উলটে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা
- নিত্যদিন দুর্ভোগে পড়ছে ১২ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের খোর্দ্দগজাইল থেকে খানপুর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার কাঁচা সড়ক দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলায় পড়ে আছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও হয়নি এ সড়কের কোনো উন্নয়ন। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, হয়ে পড়ে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য। এতে ১২ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে নিত্যদিন পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার দুর্গম উধুনিয়া ইউনিয়নের খানপুর-খোর্দ্দ গজাইল তিন কিলোমিটার কাঁচা সড়কটি উল্লাপাড়া, চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার সংযোগস্থলে অবস্থিত। বাগমাড়া, বেদকান্দি, খানপুর, মাদারবাড়িয়া, দাসমরিচসহ ১২টি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। তবে বর্ষাকালে কাদা ও জলাবদ্ধতার কারণে চলাচল একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে। যাত্রী ও পণ্যবাহী অটোভ্যান-রিকশা এবং মোটরসাইকেল প্রায়ই উলটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। এতে অনেক মানুষ আহত হয়ে হাত-পা ভেঙে পঙ্গুত্ববরণ করে। স্কুলগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হেঁটে যাতায়াতে প্রায়ই সময় চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ফলে অনেকেই স্কুলে যেতে পারে না। তাদের পড়ালেখায়ও বিঘœ-ঘটে।
গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটি কাদায় থই থই হয়ে করছে। খানাখন্দ আর গর্তে ভরা সড়কে অটোরিকশা, ভ্যান কিংবা মোটরসাইকেল নির্বিঘেœ চলতে পারছে না। চলাচল করতে গিয়ে কেউ কেউ কাদায় পড়ে আহত হচ্ছেন। বিশেষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও অফিসগামীরা। একটু বৃষ্টি হলেই শিক্ষার্থীরা স্কুলমুখী হতে পারছে না। স্থানীয় কৃষকরাও সমস্যায় পড়েছেন। পাশে ধলার বিলে প্রচুর আবাদ হলেও সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় ফসল সময়মতো বাজারে নিতে পারছেন না ফসল। ফলে তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এদিকে সড়কের কারণে সামাজিক জীবনেও প্রভাব পড়ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ করেন, চলাচল অনুপযোগী কাঁচা রাস্তার কারণে গ্রামের ছেলে-মেয়েদের ভালো বিয়ে হয় না। এমনকি রোগী পরিবহন করতেও সমস্যা হয়। বিশেষ করে গর্ভবতীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাস্তাতেই প্রসব হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
স্থানীয় ফিরোজ হাসান বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই রাস্তা অচল হয়ে পড়ে। স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও সংস্কার হয়নি। কেউ শহর থেকে গ্রামে গাড়ি নিয়ে এলে তাকে গাড়ি পাকা রাস্তায় রেখে হেঁটে যেতে হয়। আমরা অবহেলিতই রয়ে গেলাম।’
কৃষক শরিফ মিয়া জানান, কাঁচা সড়কের দুই পাশে রয়েছে বিশাল ধলারবিল। এখানে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়। বর্ষাকালে এটি চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় কৃষকেরা ফসল সময়মতো বাজারে নিতে পারে না। এতে উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পান না।
মাসুমা খাতুন নামের একজন বলেন, সড়কের কারণে অসুস্থ ও সিজারিয়ান রোগীদেরও দ্রুত উপজেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে অকালে অনেকের মৃত্যু ঘটে। মানুষ মারা গেলেও মরদেহ কবরস্থানে নিতেও দুর্ভোগে পড়তে হয়। সড়কটির দুরবস্থার কারণে অনেক সময় গর্ভবতী নারীদেরও হাসপাতালে নেওয়ার পথে সন্তান প্রসব হয়ে যায়।
ভ্যানচালক আলিম ম-ল বলেন, গাড়ি নিয়ে সড়ক দিয়ে চলা যায় না। বর্ষায় বৃষ্টিতে কাদা পানিতে গাড়ি আটকে যায়। আর খরায় লক্কড়ঝক্কড় সড়কে ঝাঁকুনির চোটে পেটের নাড়ি ব্যথা হয়ে যায়। এ ছাড়া প্রায়ই গাড়ি উলটে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মানুষেরও ক্ষতি হয় আবার গাড়ির চাকা বা অন্য যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজিম সরকার জানায়, সড়কটি বছরের অর্ধেকের বেশি সময় কাদা-পানি থাকায় শিক্ষার্থীরা যাতায়াতের সময় প্রায়ই দুর্ভোগে পড়ে। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্কুলমুখী না হওয়ায় তাদেরও লেখাপড়ায় ভাটা পড়ে। বারবার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে অনেক শিক্ষার্থী অকালে ঝরে পড়ে।
খোর্দ্দ গজাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফারজানা খন্দকার জানান, রাস্তার কারণে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসার প্রবণতা কমে গেছে। প্রতি ২৫ জনের মধ্যে অন্তত ১০ জন অনুপস্থিত থাকে।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. শহিদুল্লাহ বলেন, সিরাজগঞ্জ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খোর্দ্দগজাইল থেকে খানপুর পর্যন্ত সড়কটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একনেক থেকে অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন