মসলা জাতীয় ফসল চুইঝাল চাষ একসময় কেবল খুলনা অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন এটি দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট জেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ মসলা। বাড়ির আঙিনা কিংবা ফলদ গাছের তলায় আলাদা জমি ছাড়াই চুইঝাল চাষ করে অনেক পরিবার বাড়তি আয়ের স্বপ্ন পূরণ করছে। চুইঝাল চাষে আলাদা জমি, সার বা কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। গাছটি লতা জাতীয় হওয়ায় সুপারি, নারিকেল, আম, কাঁঠাল বা বনজ গাছকে ভর করে বেড়ে ওঠে। স্থানীয়ভাবে এটি ‘চইপান’ নামে পরিচিত। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে গাছ সংগ্রহযোগ্য হয়।
সরেজমিনে কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলায় দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বাড়ির সুপারি, নারিকেল বা অন্যান্য গাছ বেয়ে চুইঝালের গাছ জন্ম নিয়েছে। লতা জাতীয় পরজীবী এই উদ্ভিদটি ফলদ, বনজ ও সুপারি গাছে চাষ করা হয়। প্রতিটি বাড়িতে দুই থেকে চারটি করে চুইঝালের গাছ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, চারা রোপণের মাত্র দুই বছরের মধ্যে চুইঝাল বিক্রির উপযোগী হয়। আকারভেদে একটি গাছ থেকে ৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। চুইঝাল চাষে আলাদা জমি, সার, কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করার প্রয়োজন পড়ে না। একবার চুইঝাল বড় হলে একাধিকবার সেটি থেকে চুইঝাল সংগ্রহ করা যায়। গাছের শিকড় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লতা ও কা-ও মোটা হয়ে ওঠে।
কালীগঞ্জ উপজেলার মদাতি ইউনিয়নের চুইঝাল চাষি মনিরুজ্জামান জানান, এ বছর বাড়ির সুপারি ও আম-কাঁঠালের ৩০টি গাছে চুইঝাল রোপণ করেছেন। বিনা মূল্যে তিন বছর পর তিনি আশা করছেন এই গাছগুলো থেকে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করতে পারবেন।
আরেক কৃষক প্রদীপ কুমার বাড়ির ১৫০টি সুপারি ও আম-কাঁঠালসহ বিভিন্ন গাছে চুইঝাল রোপণ করেছেন। তিনি আশা করছেন দুই বছর পর এর মাধ্যমে ভালো আয় হবে।
সদর উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের চুইঝাল চাষি আব্দুল জলিল বলেন, আমি ১৫ বছর আগে বসতবাড়ির সুপারি ও আমের গাছে চুইঝাল লাগিয়েছি। এখন প্রতিটি গাছ থেকে ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার চুইঝাল বিক্রি করছি। বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা বাড়ি থেকেও এটি সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, লালমনিরহাট জেলায় ৪৭০ বিঘা জমিতে ২৬ হাজার চুইঝাল গাছ রয়েছে। চারা লাগানোর ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে চুইঝাল বিক্রির যোগ্য হয়ে ওঠে। জেলায় কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী জানান, তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে চুইঝাল সংগ্রহ করে আড়ৎদারের কাছে বিক্রি করেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আড়ৎদাররা পুনরায় সেগুলো সংগ্রহ করে। এভাবে প্রতি বছর জেলায় প্রায় ১০ কোটি টাকার চুইঝালের লেনদেন হয়।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তি রায় বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুইঝাল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। বিনা মূল্যে ও অতিরিক্ত জমি ছাড়াই চুইঝাল চাষ হওয়ায় দিন দিন এর চাষ বাড়ছে।’
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. সাইখুল আরিফিন বলেন, জেলা কৃষি বিভাগ লাভজনক এই উদ্ভিদটি চাষে কৃষকদের উৎসাহ, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।