বরিশালের তেঁতুলিয়া নদীতে ৩৩ বছর আগে ডুবে যাওয়া একটি জাপানি জাহাজ মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন ঠিকাদার একাধিকবার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হলেও এই কাজে শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছেন খুলনার আনসার উদ্দিন মিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স অগ্রণী ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট’। এক যুগের বেশি সময় ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি মাটির ৭০ হাত তলদেশ থেকে পণ্যবাহী বিদেশী এই জাহাজটি উদ্ধার করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সালের আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম থেকে বৈদ্যুতিক মালামাল নিয়ে এমভি মোস্তাবি নামে জাপানি জাহাজটি খুলনার উদ্দেশে রওনা হয়। পথিমধ্যে মেহেন্দিগঞ্জের আলীমাবাদ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড মিঠুয়া এলাকায় তেঁতুলিয়া নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যায়। তৎসময়ে সরকার জাহাজটি উদ্ধারে উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু তখন কিছু মালামাল উদ্ধার করা গেলেও জাহাজটি নদীর তলদেশেই থেকে যায়।
বিআইডব্লিউটিএ জানায়, জাহাজ ডুবির স্থানটি প্রায় দুই যুগ আগে চর আকারে জেগে ওঠে এবং পরবর্তীতে এটি মিঠুয়া গ্রাম নামে পরিচিতি পায়। সেখানে ধীরে ধীরে ফসল আবাদ করাসহ বসতি গড়ে তোলা হয়। মিঠুয়া গ্রামের মাটির নিচের এই জাহাজটি শানাক্ত করাসহ তা উত্তোলনে একাধিক ঠিকদার ব্যর্থ হওয়ার পরে ২০১৩ সনে ফের দরপত্র আহ্বান করে সংস্থাটি। এতে অংশগ্রহণ করে খুলনার আনসার উদ্দিন মিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স অগ্রণী ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট’। এই প্রতিষ্ঠানটি সর্বনি¤œ ২০ লাখ টাকায় বিদেশী এই জাহাজটি উত্তোলনে কাজ করার অনুমতি পায়। এর পরে এক যুগের বেশি সময় ধরে চেষ্টা চালিয়ে অবশেষে জাহাজটি সম্পূর্ণরূপে সফল হয়।
জাহাজ উত্তোলন কাজে সম্পৃক্ত আব্দুল মন্নান বলেন, ১৮০ ফুট দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ১৪ ফুট এবং ১৭ ফুট উচ্চতার জাহাজটি ৫ একর মাঠি ৭০ হাত খনন করে উত্তোলন করা হয়। উদ্ধার জাহাজের দামি যন্ত্রাংশের মধ্যে রয়েছে মেশিন, যে মেশিন বর্তমান বাজারে নেই বললেই চলে। থাকলেও নতুন মেশিনটির মূল্য হবে আনুমানিক ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকা। তবে এই বিকল মেশিনটি ভাঙারি হিসেবে বিক্রি করলেও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা পাওয়া যাবে।
জাহাজটি উদ্ধার করে প্রশংসায় ভাসছেন ‘মেসার্স অগ্রণী ওয়াটার ট্রান্সপোর্টের’ সত্ত্বাধিকারী ইউসুফ মিয়া। তিনি বলেন, জাহাজটি উদ্ধার করতে এসে একাধিক ঠিকাদার ব্যর্থ হয়েছে। এরপরে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, কিন্তু কিছুতেই সম্পূর্ণরূপে তোলা সম্ভব হয়নি। এক যুগ চেষ্টা চালিয়ে সবশেষে কদিন হলো জাহাজটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি, এতে অনেক ভালো লাগছে মন্তব্য করেন ইউসুফ মিয়া।
জাহাজটি পুরোপুরি উদ্ধার করা হয়েছে নিশ্চিত করেন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রিয়াজুর রহমান। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে জানান, উত্তোলনের পরে জাহাজটি মিঠুয়া গ্রামে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে উর্ধ্বতনদের সাথে পরামর্শ করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’