- নির্মাণের ৬ মাস পেরোলেও হয়নি সংযোগ সড়ক
- বাধ্য হয়ে মই লাগিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয়রা
- সেতুতে উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন চলাচলকারীরা
সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনো হয়নি দুই পাশের সংযোগ সড়ক। বাধ্য হয়ে বাঁশের মই লাগিয়ে সেতুর সঙ্গে অস্থায়ী সংযোগ তৈরি করে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। অনেক সময় মই বেয়ে সেতুতে উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় লোকজন। এতে তাদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হলেও প্রভাবশালী ঠিকাদারের ভয়ে কিছুই বলতে পারছেন না।
জানা যায়, বরিশালের আগৈলঝাড়ার রাজিহার ইউনিয়নের বাশাইল এলাকার সড়ক দিয়ে চলার পথে সেতুটির অবস্থান। ইউনিয়নের বাশাইল কলেজের শিক্ষার্থীদের পারাপারের সুবিধার জন্য ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল ২৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬১৮ টাকা ব্যয়ে ওয়াপদা খালের ওপর সেতু নির্মাণের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। মুলাদীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স পাপ্পু এন্টারপ্রাইজ’ কাজটি পায়। ওই বছরের ৬ আগস্ট কাজ শুরু করে চলতি বছরের মার্চে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়। দীর্ঘ ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদার ব্রিজের দু-পাশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর পারাপার হতে হচ্ছে বাঁশের মই বেয়ে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্মিত সেতুটির সঙ্গে সংযোগ সড়ক না থাকায় তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। বর্ষা মৌসুমে সেতুর নিচের অংশ পানির নিচে তলিয়ে যায়। তখন সেতু পারাপারে চরম বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। আর শুকনা মৌসুমে সেতুতে উঠতে মই ছাড়া উপায় নেই। উঁচু রাস্তা না থাকায় এর দুই পাশে থাকা দুটি মই-ই একমাত্র ভরসা তাদের।
তবে সেতু নির্মাণের ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও সংযোগ সড়ক না হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। বাঁশের মই বেয়ে উঁচু সেতুতে অনেকে উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের। শুধু তাই নয়, এ সেতু দিয়ে প্রতিদিন শত শত লোক যাতায়াত করছেন। মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন তারা। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হলেও তারা প্রভাবশালী ঠিকাদারের ভয়ে কিছুই বলতে পারছেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর দুই পাশে কৃষিজমির পাশ দিয়ে সরু রাস্তা। ওই রাস্তা দিয়েই চলাচল করছে শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা। সেতুর উত্তরে বসতবাড়ি ও খাল রয়েছে। অন্য পাশে রয়েছে কলেজ। দুই পাশের মানুষের চলাচল করতে হয় এ সেতু দিয়ে। তবে সংযোগ সড়ক না থাকায় মই বেয়ে সেতু পারাপার হতে বয়স্ক নারী-পুরুষ ও শিক্ষর্থীদের জন্য কষ্টকর হচ্ছে। আবার কৃষি জমির ফসলও তুলতে পারছেন না কৃষকরা।
বাশাইল কলেজের ফাতেমা আক্তারসহ একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মই বেয়ে সেতু পারাপার হতে আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় আমরা মইয়ের নিচের পানিতে পড়ে যাই। এতে কলেজের ড্রেস ও বই-খাতা ভিজে যায়। তার পরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সেতু পারাপার হতে হয়।’
স্থানীয় আজিবার রহমান বলেন, ‘২৮ লাখ টাকা দিয়ে সেতু তৈরি করে যদি মই দিয়ে পারাপার হতে হয়, তাহলে সেতুর তো দরকার ছিল না। আমাদের অনেক কষ্ট হয় এ সেতু দিয়ে চলাচল করতে। মই বেয়ে বাইসাইকেল, রিকশা, ভ্যান ও মোটরসাইকেল তো পারাপার করা যায় না। এ জন্য দ্রুত সেতুর দুই পাশে মাটি ফেলানোর ব্যবস্থা করা হোক। তা না হলে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সেতু কোনো কাজে আসবে না।’
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. বাদল হোসেন বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ হলেও আমি কাজ করতে পারিনি। যারা কাজ করেছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ করার ব্যবস্থা করে দেব।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা অয়ন সাহা বলেন, ‘টেন্ডারটি আমি আসার আগে হয়েছে। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। তার পরেও আমি সরেজমিন সেতু পরিদর্শন করেছি। সেতুর দুই পাশের রাস্তায় মাটি ভরাট করে দ্রুত সময়ের মধ্যে চলাচলের উপযোগী করে দেওয়া হবে।’