ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫

ভূমিকম্পের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ঝুঁকিতে দেশের যে দুই জেলা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৫, ১২:১০ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

দেশে অল্প সময়ের ব্যবধানে চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে, সম্প্রতি ভূমিকম্পে ১১ জনের মৃত্যু এবং বিভিন্ন এলাকায় ভবন হেলে পড়া ও ফাটলের ঘটনায় অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় নিজেদের নিরাপদ রাখতে ভূমিকম্প সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য জানার চেষ্টা করছেন সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, বাংলাদেশের নিচে তিনটি শক্তিশালী টেকটোনিক প্লেট ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান এবং বার্মা প্লেট নিরন্তর নড়াচড়া করছে। এই স্থায়ী ঘর্ষণ ও সরে যাওয়ার ফলে তৈরি হয়েছে ‘ডাউকি ফ্লট’। মধুপুর ও সিলেট লাইনমেন্টসহ একাধিক সক্রিয় ফল্ট লাইন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসবের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ও সম্ভাব্য বড় ভূমিকম্পের উৎস হলো মধুপুর ফল্ট, যা প্রায় চার শতাব্দী ধরে ভয়াবহ চাপ জমিয়ে রেখেছে।

গবেষণা বলছে মধুপুর ফল্টে জমে থাকা এই চাপ হঠাৎ মুক্ত হলে রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৫ থেকে ৮ মাত্রা পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে। যা দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে বিরল এক বিপর্যয় ডেকে আনতে সক্ষম। ভয়াবহ বিষয় হলো- রাজধানী ঢাকা এই ফল্ট থেকে দূরত্বে মাত্র ৭০ কিলোমিটার। ফলে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে বিপর্যস্ত এলাকাগুলোর তালিকায় ওপরেই থাকবে ঢাকা ও টাঙ্গাইল অঞ্চল।

বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মাত্র ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও ঢাকার ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ও পুরোনো ভবনগুলো এই ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

২০০৭ সালে মধুপুর ফল্ট পর্যবেক্ষণের জন্য একটি আধুনিক সিসমোগ্রাফ স্থাপন করা হয়েছিল। এই যন্ত্র ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা, ফল্ট লাইনের নড়াচড়া, মাইক্রো-ট্রেমরসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করত। কিন্তু এখন সেই যন্ত্রের কোনো হদিসই নেই ফলে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে তৈরি হয়েছে ভয়ংকর শূন্যতা।

গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) নরসিংদীকে কেন্দ্র করে অনুভূত ভূমিকম্পের পর মধুপুর ও আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

এমবিএসটিইউ-এর পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এএসএম সাইফুল্লাহ জানান, ‘আধুনিক প্রযুক্তি ও নির্ভুল মনিটরিং ব্যবস্থার মাধ্যমে মধুপুর অঞ্চলের ভূমিকম্পজনিত ঝুঁকি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে।’

২০১২ সালের এক ভূমিকম্পে মধুপুরের অরণখোলা ইউনিয়নের বোকারবাইদ গ্রামে প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে বিশাল ফাটল সৃষ্টি হয়েছিল। ফাটলের ব্যাস ছিল ৫–৬ ইঞ্চি এবং গভীরতা প্রায় ২৫–২৬ ফুট। এ ঘটনা স্পষ্ট করে দেয় এই অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় ও ঝুঁকিপূর্ণ।