রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে শুক্রবার (২১ নভেম্বর)। এতে অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতিসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় অন্তত তিন শতাধিক। এমন ঘটনার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই ফের ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় শনিবার (২২ নভেম্বর) মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। তবে এতে এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এমন ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিবেচনায় দেশের বেশ কয়েকটি জেলাকে ঝুঁকিপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক মানচিত্রে বাংলাদেশকে মোট তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চঝুঁকির আওতাভুক্ত অঞ্চলকে জোন-১, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা জোন-২ এবং জোন-৩-এর এলাকা নিম্ন ঝুঁকিপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত।
প্রকাশিত মানচিত্র অনুযায়ী দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি এলাকা জোন-১-এর আওতায় সর্বোচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত। সাধারণত ফল্ট লাইন বা প্লেট বাউন্ডারির আশপাশের এলাকা ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৯টি জেলা, ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নরসিংদীর কিছু অংশ, পুরো কিশোরগঞ্জ জেলা, কুমিল্লা বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বেশ কিছু এলাকা উচ্চঝুঁকিপ্রবণ।
তবে জোন-৩-এর এলাকা হিসাবে খুলনা, যশোর, বরিশাল এবং পটুয়াখালী এলাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি সর্বনিম্ন।
প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে অন্তত ৫ দফা বেশ জোরালো ভূকম্পন অনূভূত হয়। এর প্রায় সবগুলোর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান এবং কক্সবাজার এলাকা। ফলে ভবিষ্যতে এসব এলাকায় আরও বড় ধরনের কম্পনের আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও মেঘালয়ের সীমান্তসংলগ্ন সিলেট, ময়মনসিংহ অঞ্চলকে উচ্চমাত্রার ঝুঁকিপ্রবণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের চারপাশে ভূমিকম্পের পাঁচটি উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করা আছে। এর একটিকে বলা হয় প্লেট বাউন্ডারি-১, যেটা মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত। এ ছাড়া প্লেট বাউন্ডারি-২ নোয়াখালী থেকে সিলেট এবং প্লেট বাউন্ডারি-৩ সিলেট থেকে ভারতের দিকে চলে গেছে। অন্যদিকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকায় ডাউকি ফল্ট এবং মধুপুর ফল্ট রয়েছে। এগুলোই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকায় প্রায় ২১ লাখের মতো ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ লাখ ভবন দ্বিতল বা এর চেয়ে কম। এগুলোর ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। কিন্তু ৪ থেকে ৩০ তলা পর্যন্ত বাকি ৬ লাখ ভবন উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। ভূমিকম্পের সময় এগুলো ধসে পড়লে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য সংস্কারের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভূমিকম্প সহনশীল করে তোলার কথা বলা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্প সবচেয়ে ভয়াবহ এবং অনিশ্চিত প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর অন্যতম। এটি প্রতিরোধের ক্ষমতা কারও হাতে নেই। তবে ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসে ভূমিকম্পের আগাম সংবাদ বা পূর্বাভাস প্রাপ্তির ওপর বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়। এক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে। ভূমিকম্পের আগাম পূর্বাভাসের গবেষণায় জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও বেশকিছু দেশ বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে।

