*** ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক
*** প্রশাসনের অভিযান শুধু আনুষ্ঠানিকতা
*** ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা রাজধানীমুখী ও সিলেটগামী যানবাহন
*** চাঁদাবাজ চক্র প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে প্রতিদিন দোকানিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে অভিযোগ স্থানীয়দে
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দেশের অন্যতম ব্যস্ততম সড়ক। অথচ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতা অংশে এসে সেই মহাসড়ক যেন পরিণত হয়েছে বিশৃঙ্খল এক কাঁচাবাজারে। ভুলতা ফাঁড়ি পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের চোখের সামনেই প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মহাসড়কের দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে বসছে বাজার। যেখানে মাছ, সবজি, ফলমূল, কাপড়, জুতা থেকে শুরু করে নানা পণ্যের পসরা সাজানো। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে মহাসড়কের গতি, সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি। রাজধানীমুখী ও সিলেটগামী যানবাহনগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় বাজার এলাকা পার হতে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সামনের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় ভ্যান, ঠেলাগাড়ি ও দোকানিদের দখলে রয়েছে রাস্তার বড় অংশ। তার ওপর বাস, লেগুনা, সিএনজি, অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও ট্রাকের অবৈধ স্ট্যান্ড পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মহসিন ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাস্তাটা এখন আর রাস্তা নেই, পুরোপুরি বাজারে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সকাল-বিকেল যানজটে আটকা পড়তে হয়, পুলিশ দেখেও কিছু করে না।
গণঅধিকার পরিষদের স্থানীয় নেতা কাউসার আলী বলেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখন দেখলে মনে হয় পাইকারি বাজার। রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল চাঁদাবাজির জন্যই এখানে অবৈধ স্ট্যান্ড ও দোকান বসিয়েছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও ফলাফল থাকে অস্থায়ী। সকালবেলা অভিযান চালালেও বিকেলের মধ্যে পুনরায় দখল হয়ে যায় মহাসড়ক। ফ্লাইওভারের নিচে প্রতিদিন কয়েকশ ভ্রাম্যমাণ দোকানি কলা ও আখ বিক্রি করে, যাদের সরাতে গেলে বাধার মুখে পড়ে পুলিশ।
ভুলতা হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ মোফাখখির উদ্দিন জানান, আমরা প্রতি সপ্তাহেই অভিযান চালাই এবং দোকানিদের সতর্ক করি। কিন্তু তারা বেপরোয়া আচরণ করে, পুনরায় দোকান বসায়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি দখল করে এসব দোকান বসানো হচ্ছে। স্থানীয় এক চাঁদাবাজ চক্র প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে প্রতিদিন দোকানিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। অনেকে দাবি করেন, তারা ‘অনুমতি’ পেয়ে দোকান বসান, তবে সেই অনুমতির কোনো সরকারি প্রমাণ নেই।
এক দোকানি বলেন, আমরা টাকাটা দিই, তারা বলে সমস্যা হবে না। কে বৈধ, কে অবৈধ তা আমরা জানি না। দোকান না থাকলে আমাদের সংসার চলবে না।
এদিকে উল্টো পথে সিএনজি, ব্যাটারিচালিত যান ও অটোরিকশা চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভুলতা ও গোলাকান্দাইল এলাকায় একাধিক প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সমাজসেবক সহিদুল ইসলাম বলেন, আমার চোখের সামনে এক ট্রাকের নিচে ভ্যানচালক চাপা পড়ে মারা গেছে। তারপরও কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয় না।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন লাখো মানুষ এই রুটে যাতায়াত করেন। অথচ মহাসড়ক এখন বাজার, দোকানপাট ও যানজটের কু-লিতে জর্জরিত। প্রশাসনের অভিযান যেন কেবল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন জনগণের করের টাকায় তৈরি চারলেন মহাসড়কের সুফল কেড়ে নিচ্ছে কারা? তাদের প্রত্যাশা, হাইওয়ে পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বিত উদ্যোগেই হয়তো মুক্তি মিলবে এই দখল ও বিশৃঙ্খলার কবল থেকে।